পথিক তুমি পথ হারিয়েছো??

Published On: March 10, 2012By Tags: Views: 18

অসাধারণ এই পেজটাতে যোগ দিয়ে লেখালেখির নার্সারি শ্রেণীতে অবস্থান করছি আমি। এই পেজের সুবাদেই অনেক নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ হয়েছে। অনেকের সাথে ফেসবুকে বন্ধুত্বও হয়েছে। সেই কারণে তাদের স্ট্যাটাস আপডেট গুলো দেখতে পাই। আজ আমার এই লেখার উপলক্ষ সেরকম এক বন্ধুর কিছু স্ট্যাটাস। পাঠক আপনাকে প্রথমেই বলে দিচ্ছি আজ আমি কোন গল্প নিয়ে বসিনি। আজ কোন গল্পের টানটান উত্তেজনায় আপনাকে শিহরিত  করারও চেষ্টা করবনা। শুধুমাত্র একজন বন্ধুর জীবনের একটি অধ্যায় নিয়ে  নিজের কিছু আবেগ তুলে ধরব। হাজার হোক জীবনের আবেগের সমষ্টিই তো আমরা লেখার মাধ্যমে তুলে ধরি। এখন পাঠক আপনি যদি আমার এই লেখার সাথে থাকতে চান তাহলে আপনাকে স্বাগতম। আর যদি না চান তবে আপনার জন্য অনেক শুভকামনা।

বেশ কিছুদিন থেকে একজন বন্ধুর স্ট্যাটাসে হতাশার বাণী দেখতে পাচ্ছিলাম। ভালোবাসায় ব্যর্থ একজন মানুষের হাহাকার। প্রচন্ড কষ্টের আবেগভরা প্রকাশ। ভেবেছিলাম এমনতো কত জনই দেয়। এখন এটা তো একটা ফ্যাশন। দুদিন পরই দেখা যাবে নতুন রিলেশনশিপ এর জন্য সবার কাছ থেকে শুভকামনা পাচ্ছেন। কিন্তু আমার ভুল ভাঙল ২ দিন আগের একটা স্ট্যাটাসে। যদিও এখন পর্যন্ত আমার মনে হচ্ছে এটা উনার আবেগেরই প্রকাশ যা হয়ত সময়ের সাথে সাথে ফিকে হয়ে যাবে। কিন্তু সেই বন্ধুটি যে ভাবে, যে পথে তার কষ্ট প্রকাশ করে মনের দুঃখ লাঘবের চেষ্টা করছেন তা তার এবং তার পরিবারের জন্য মোটেও ভাল কিছু নয়। না পাঠক তিনি আত্নহত্যা করেননি। তিনি একেবারে উচ্ছন্নেও যাননি। হয়ত এখনো মাদক ধরেননি। কিন্তু এখন যা করছেন তাও ভালো কিছু না। তিনি এই পেজের একজন নিয়মিত পাঠক হিসাবে এই লেখাটা দেখবেন এই আশায় লিখছি।

এখন বলি তিনি কি করেছেন। তিনি একটি টিস্যু পেপারে নিজের রক্ত দিয়ে তার ভালবাসার মানুষের নাম লিখেছেন। ভালবাসার চিহ্ন একেছেন। আর পাশে আরেকটি টিস্যু পেপারে সেই রক্ত মুছে সুন্দর করে সাজিয়ে ছবি তুলেছেন। এরপর সেই ছবি আপলোড করেছেন। পাঠক আপনি হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন ‘এটা নিয়ে একটা পোস্ট দেবার কি হল? এটাতো এখন অনেক পুরানো ব্যাপার। কত মানুষ এমন করে। এরচেয়ে খারাপ কিছুও করে। আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন যে এটা তারই রক্ত? এটা তো নাটক, ইত্যাদি ইত্যাদি’। আমি আপনার প্রশ্ন গুলোর সাথে একমত। সম্পূর্ণ একমত। তারপরও আমি তার জন্য কিছু লিখছি। আমরা কেউই জানিনা যে এসব ঘটনা সত্যি না মিথ্যা। কিন্তু আমি আমার বাস্তব জীবনে এমন কয়েকজন কে দেখেছি যারা তাদের হাত কুচিকুচি করে কেটে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভালোবাসার আবেগে দিশেহারা সেই মানুষ গুলো ভুলে গেছে তাদের সবকিছু। আমার এই লেখাটা-সেই সব কষ্টে থাকা, নিজেকে হারিয়ে খোঁজা, চোখের জলে রাত পার করা মানুষ গুলোর জন্যই।

 

‘বন্ধু’,

অনেক কষ্টে আছো কি? না পাওয়ার বেদনায় নীল হয়ে দুঃখ বুকে চেপে জীবনের পথ চলার চেষ্টা করছ? কারণ কি এটা যে তুমি কারও ভালোবাসা পাওনি? বা পেয়েছিলে, হারিয়ে ফেলেছ? বা যাকে নিজের সবটুকু উজাড় করে ভালোবেসেছিলে সে কিছুদিন পর তোমার সব আবেগকে তুচ্ছ করে চলে গেছে? এখন নিজেকে হারিয়ে, জীবনের পথ ভুলে তুমি দিশেহারা। আচ্ছা বন্ধু আমি তোমাকে একটু পিছনে ফিরে তাকাতে বলবো। একটু কষ্ট করে নিজেকে নিয়ে যাও সেই ছেলেবেলায়। যে সময়টাতে একটা খেলনার জন্য তুমি তোমার সবকিছু দিয়ে দিতে পারতে। যে সময়ে তুমি ভাবতে বিকালে খেলতে যাওয়াটাই জীবনের একমাত্র আনন্দ। যখন খুব কাছের কোন বন্ধুর সাথে একদিন দেখা না হলে মনে হত জীবনটাই বৃথা। কি? ফিরে গিয়েছ সেখানে? এবার চোখটা মেলে দেখতো সেই সময়ের প্রচন্ড আকর্ষনের বিষয়গুলো এখন তোমার চারপাশে আছে কিনা? হয়ত তুমি হারিয়ে ফেলেছো সেই খুব প্রিয় খেলনাটা। হয়ত জীবনের পথে চলতে চলতে তুমি হারিয়ে ফেলেছো তোমার সেই বন্ধুটিকে যাকে ছাড়া তোমার চলতো না। না বন্ধু তারা নেই। এবং এটাই সত্য যে সময়ের সাথে আমরা পরিবর্তিত হই। পরিবর্তিত হয় আমাদের চারপাশ। এমনকি চারপাশের মানুষগুলোও। কিন্তু একটু পরে আমি এমন কিছু তোমার সামনে নিয়ে আসব যা কখনো পরিবর্তিত হয়না। তার আগে তোমাকে আমি কিছু বলতে চাই।

 

আচ্ছা বন্ধু ভালোবাসা খুব সুন্দর, না খুব খারাপ কোন অনুভূতি? তুমি হয়তো বলবে খুব খারাপ। শুধুই কাঁদায়। আবার অন্য কেউ হয়তো বলবে খুবই সুন্দর। জীবন কে মধুর করে। তাহলে কি এটা প্রমানিত হচ্ছে না যে দোষটা আসলে ভালোবাসা নামক অনুভূতিটার নয়। ব্যক্তি বিশেষে এবং সময়ের তারতম্যে এটা পরিবর্তনশীল। আজ যখন তোমার চোখের জলে বিছানার বালিশটা ভিজে যায় তখন হয়তো তোমার সেই প্রিয় মানুষটি অন্য কারও সাথে মেতে ওঠে উচ্ছল আবেগী কথামালায়। ভালোবাসার অনুভুতি কিন্তু দুই জায়গাতেই আছে।

বন্ধু, জীবনের পথে হাটতে হাটতে আমরা নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলি। ভালোবাসা নামক অনুভূতি কখনো জিজ্ঞেস করে অন্তরে প্রবেশ করে না। এবং অবাক করা ব্যাপার হল বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা ভুল মানুষকে ভালোবাসি। প্রথম বারেই মনের মত সঠিক মানুষটিকে যারা ভালোবাসতে পারেন তারা অনেক ভাগ্যবান। তাহলে তোমার বা আমার মত যারা তারা কি হতভাগার দল? তুমি হয়ত নিজেকে অনেক আগেই সেই দলের একজন হিসাবে ধরে নিয়েছ। কিন্তু আসলেই কি তাই? কখনও না। তুমি একজনকে ভালোবাসেছিলে। সে তোমাকে ভালোবাসেনি এটাই কি কাউকে হতভাগা বানিয়ে ফেলার জন্য যথেষ্ট??

যদি তাই হয় তবে তুমি তাদের কে কি বলবে যারা প্রতিনিয়ত জীবন ধারণের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। যারা একমুঠো ভাতের জন্য ডাস্টবিনে ডাস্টবিনে কেঁদে ফিরছে। যারা শারীরিক ভাবে অক্ষম হয়ে মানুষের করুণা নিয়ে প্রচন্ড মানসিক কষ্টে দিন পার করছে। তুমি কি তাদের চেয়েও অভাগা?? একজন মানুষ তোমাকে ভালোবাসেনি বলেই কি তোমার সব কিছু নিঃশেষ হয়ে গেছে? তাহলে কি তুমি ছোট্ট ‘মেঘের’ (সাগর-রুনির সন্তান) চেয়েও শূন্য?? তোমার শূন্যতা কখনো পূরণ হবে কিনা সেটা তর্ক সাপেক্ষ। কিন্তু একবার চিন্তা করে দেখতো স্বজন হারানো সেই মানুষ গুলোর কথা। তাদের সেই শূন্যতা যে কখনো পূরণ হবে না তা তো তর্কের অতীত। তোমার বিবেক কি এই প্রশ্ন গুলো তোমাকে করেনা? তুমি কি এতটাই স্বার্থপর যে নিজের মানসিক কষ্ট ছাড়া অন্যের কষ্ট তোমার চোখে পরেনা। তুমি কি এতটাই স্বার্থপর যে নিজের দিকে তাকানো ছাড়া অন্যের দিকে তাকানোর সময়টুকুও পাওনা?

 

বন্ধু, আমি তোমাকে খুব দূরে কোথাও তাকাতে বলবো না। তোমাকে বলেছিলাম একজনের সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেবো। এখন দিচ্ছি। তুমি শুধু একটি বার তোমার মায়ের দিকে তাকাও। তার চোখে চোখ রাখ। কি দেখছো সেখানে? ঘৃনা? হতাশা? বিরক্তি? তোমার প্রতি অবজ্ঞা? করুণা? প্রতারনার ছায়া? না না না। আমি বাজি ধরে বলতে পারি এসবের কিছুই তুমি দেখছো না। সেখানে তুমি দেখছো পৃথিবীর শুদ্ধতম ভালোবাসা। যার অভাবে তোমার জীবন থমকে আছে। হয়তো তুমি বলবে ওটা তো অন্যরকম ভালোবাসা। মায়ের ভালোবাসাতো আলাদা। তোমার কথা অবশ্যই সত্যি। কিন্তু একবার ও কি ভেবেছো তোমাকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশী ভালোবাসতে পারা এই মানুষটির ভালবাসার পরিমান কত? কখনও মাপতে যেয়োনা। তুমি কোনদিনও তা মাপতে পারবেনা। এই মানুষটির ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার কোন ধারনা আছে কি? তুমি কি বুঝতে পার তোমার চোখের এই বিষন্নতা তাকে কতটুকু কষ্ট দেয়? তোমার হাসির শুষ্কতা তার জীবনের সব উজ্জ্বলতা কে মলিন করে দেয়? ‘বন্ধু???’-তুমি কার অপরাধে কাকে কষ্ট দিচ্ছ? কার আশা-ভরসা কে ধ্বংস করছো কোন এক না-পাওয়া অনুভূতির শোকে?? তুমি যা করছো, যে পথে চলছো তা কি তোমার মায়ের দেখা স্বপ্ন ছিল? তোমার এই জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচা, হতাশার চাদরে নিজেকে ঢেকে রাখা এসব কিছুর জন্যই কি তার এই আত্নত্যাগ? ত্যাগের কথা যখন আসলোই তখন বলি। তুমি আজ তোমার রক্ত ঝরিয়ে তোমার না-পাওয়া অথবা ছেড়ে যাওয়া ভালোবাসার মানুষের নাম লিখছো। অথচ এই পৃথিবীতে তোমার দেহের প্রতিটি রক্ত কনিকায় যদি কারো অধিকার থাকে তবে তা তোমার মায়ের। তোমার মায়ের রক্তের বহন করা অক্সিজেনই ছিল ৯ মাস তোমার জীবন বায়ু। সেই ত্যাগ তুমি এত সহজে ভুলে গেলে?? তুমি ভুলে গেলে তোমাকে বড় করার জন্য তার দিন-রাত পরিশ্রমের কথা? আর কত উদহারণ চাই তোমার? কোন অজানা ঐশ্বর্যের সন্ধানে ছুঁটে তুমি পৃথিবীর সব থেকে বড় ঐশ্বর্যের অবমাননা করছো বন্ধু? একটি বার নিজেকে প্রশ্ন করে দেখো।

তুমি ভেবো না আমি তোমার আবেগকে ছোট করে দেখছি। তুমি মনে করো না আমি তোমার চোখের জলের অপমান করছি। প্রচন্ড কষ্টের হাহকারে যে অশ্রুর জন্ম তাকে অপমান করার সাধ্য আমার নেই। তুমি আমাকে ভুল বুঝনা। আমি শুধু তোমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি তোমার ভুলে যাওয়া কথা গুলো। আমি শুধু তোমার সামনে তুলে ধরছি মানুষ হিসাবে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য। শুধু এটুকু অনুরোধ করছি নিজের অপ্রাপ্তির আগুনে যে দুঃখের জন্ম তার ছোঁয়ায় তোমার সুন্দর ভবিষ্যতকে হতাশার ছাইয়ে পরিণত করোনা। যে ভবিষ্যতের স্বপ্নে তোমার বাবা-মা, ভাই-বোন ঘুমের মাঝে হেসে ওঠে তাদের সেই স্বপ্ন গুলোকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করনা। নিজেকে নিজের কাছে ভবিষ্যতে অপরাধী করার সব আয়োজন তুমি শেষ করে এনেছো প্রায়। তবুও শেষবারের মত তোমার হাসি-খুশি ভরা পরিবারের দিকে তাকিয়ে হলেও তুমি ফিরে এসো।

মানুষ হিসেবে তুমি মহান। কারণ তুমি পবিত্র হৃদয় দিয়ে শুদ্ধ ভালোবাসার পূজা করেছো। কিন্তু যে দেবতা/দেবী সেই অর্ঘ্যের সম্মানটুকু রাখতে পারেনি তাকে মনের মন্দিরে ঠাই দিয়ে পরম পূজনীয় বাবা-মা কে কষ্ট দিয়ে অসম্মান করার মত পাপী হওয়াটা কি খুব দরকার? ক’ফোটা রক্তের বিনিময়ে তুমি একফোঁটা ভালোবাসা কিনতে চাও? কত সাগর অশ্রু শুকিয়ে তুমি ভালোবাসার মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরাবে? যে সত্যি ভালোবাসে সেতো এমন বিনিময়ের আশায় বসে থাকেনা বন্ধু।

আমি জানি এবং বিশ্বাস করি তুমি একদিন ঠিকই সত্যি ভালোবাসার সন্ধান পাবে। একদিন আবার তোমার স্বপ্নের বাগানে অসম্ভব সুন্দর ফুল ফুটবে। তোমার আকাশে আবার আশার রোদ হেসে উঠবে। কিন্তু সেদিন যেন নিজের পায়ের নিচে শক্ত মাটি থাকে। না হলে সেই প্রকৃত ভালোবাসাও হারাতে হতে পারে সমাজের কঠিন বাস্তবতায়। পায়ের নিচের মাটি শক্ত করার এখনই সময়। এমনভাবে ভিত্তি মজবুত কর যার উপর ভালোবাসার মানুষটিকে কোলে নিয়ে দাড়ানোর সাহস পাও। আর যদি ভালোবাসার মানুষের ভারে পরে গিয়ে হাড় ভেঙ্গে ফেল তাহলেও ভয়ের কিছু নেই। আমি আছি না। তোমার ডাক্তার বন্ধু।

তাহলে এবার উঠো। আর নয় স্বেচ্ছা নির্বাসন। সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে মায়ের কাছে যাও। মায়ের কোলে মাথা রেখে তাঁর আঁচলে মুখ লুকিয়ে চিৎকার করে কাঁদো। আম্মু অবাক হলে বলো, ‘সারা জীবন তোমাকে আমার হাসি মুখ দেখাবো বলে জীবনের সব কষ্টের অশ্রুগুলো আজ তোমার আঁচলের নির্ভরতায় জমা দিয়ে গেলাম’।

এটাই হোক তোমার জীবনের বিষাদ মাখা কান্নার সমাপ্তি। আনন্দের অশ্রু চিকচিক করে উঠুক তোমার সফলতায়। বারবার। সব সময়।

ভালো থেকো বন্ধু। পরিবার কে ভালো রেখো।

latest video

news via inbox

Nulla turp dis cursus. Integer liberos  euismod pretium faucibua

Leave A Comment