উপলব্ধি

Published On: February 23, 2012By Tags: , , Views: 24

হ্যালো, হ্যালো রাহাত? দোস্ত একটু ক্যান্টিনে আসতে পারবি? জরুরী দরকার আছে। কথাটা বলেই ফোন রেখে দেয় ঐশি। এটা ওর গত ৫ মিনিটে করা ৯ নাম্বার ফোন। জীবনে এটুকু সময়ে এত ফোন কখনো করেনি ও। সব দোষ ওই সুমনের। ভাবে ও। কেন যে আল-আমিন স্যার কে বলতে গেলো কথাটা। এখন সব ঝামেলা এসে পড়েছে ওর উপর। শয়তানটা আসুক আজকে। মনে মনে চিন্তা করতে থাকে কিভাবে সুমনকে একটা বাঁশ দেয়া যায়।

“কিরে কি খবর? হঠাৎ ক্যান্টিনে তলব? treat দিবি নাকি?’’ – ঐশি তাকিয়ে দেখে রাহাত এসেছে।

-“হুমম। আমার কুলখানির দাওয়াত। খেয়ে যাবি কিন্তু’’।

-“Bull shit কি বলিস? তাহলে ফোন দিলো কে? তোর ভূত?’’

-“রাহাত please আর মেজাজ খারাপ করিস না। এমনিতেই বিশাল prob এ আছি’’।

-“কে? কে prob এ আছে dear Ash?’’ – ঐশির দিকে তাকিয়ে খুব সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলে সুমন।

সুমনের হাসি আর কথা ২ টাই ঐশির মেজাজ খুব খারাপ করে। কিন্তু যথাসম্ভব ঠান্ডা গলায় বলে – “তুই তো জানিস তারপরও কেন ফাইজলামি করছিস? আল-আমিন স্যার এর কাছে আমার নাম টা তো তুইই propose করলি’’।

-“ওহ এজন্যই জরুরী ভাবে আসতে বলেছিস? এটা কোনো ব্যাপার হলো?’’

-“Well আমি কিন্তু কিছু জানিনা ঐশি’’। – রাহাত ঘটনা জানতে চেয়ে জিজ্ঞাসা করে।

-“সবাই আসুক একবারে বলছি’’।

ওদের কথার মাঝে একে একে ক্যান্টিনে আসে রাসেল, সুজন, তমা, দীপা, রূপা আর বাদল। এবার ঐশি বলা শুরু করে।

-“Well friends আমি extremly sorry যে তোদের সবাইকে কষ্ট দিয়ে এখানে এনেছি। But I am helpless and I need your help’’

রূপাঃ “কি হয়েছে খুলে বল’’

-“আজ সকালে 1st period এর পরে আমি আর সুমন আল-আমিন স্যার এর কাছে গিয়েছিলাম নোট এর জন্য। সেখানে স্যার আমাদেরকে বলেছেন ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে একটা কালচারাল প্রোগ্রাম করতে হবে। দায়িত্বটা উনি কাকে দেবেন সেটাই আমাদের কাছে জানতে চাইলেন। Suddenly এই সুমন stupid টা বলে বসলো – “স্যার ঐশি তো cultural icon। ও এগুলা খুব ভালো পারে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। এরপরে আকাশ থেকে পরলাম যখন স্যার একটা লিস্ট ধরায় দিয়ে বললেন ‘১ সপ্তাহের মধ্যে সব রেডি চাই’। এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে থামে ঐশি।

রূপাঃ “কই দেখি লিস্টটা দে’’।

ঐশি ব্যাগ থেকে লিস্ট বের করে দেয়।

তমাঃ “Wow it’s gonna be exciting’’

বাদলঃ “হুমম। but কি করতে হবে আমাদের?’’

ঐশিঃ “লিস্ট দেখ। এই রূপা লিস্ট পড়ে শোনা’’।

রূপাঃ “হুমম। শোনো সবাই। এটা অনেকটা time table এর মতো। 21st Feb তে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটা সিডিউল দেয়া আছে। ৫.৩০ এ প্রভাত ফেরী, ১১.০০ টা থেকে ২.০০ আলোচনা অনুষ্ঠান, ২.০০ টা থেকে ৩.০০ টা লাঞ্চ। ৩.৩০ থেকে ৫.৩০ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর এর পরে Special VC award।

সুজনঃ “এরপর ডিনার নাই? দেখনা ভালো করে’’।

ওর কথায় সবাই হেসে ওঠে।

দীপাঃ “তো আমাদের কি দায়িত্ব পালন করতে হবে?’’

ঐশিঃ “আমাদের দায়িত্ব ২টা। এক হলো প্রভাত ফেরীতে সবাইকে আসতে বলা আর দুই হলো কালচারাল প্রোগ্রাম’’।

বাদলঃ “Good very good. Lets do it dude’’.

ঐশিঃ বললেই তো হলো না। কিভাবে কি করবি ঠিক কর।

তমাঃ “Well basically প্রভাত ফেরীর কথা জানিনা। কালচারাল প্রোগ্রাম এ আমরা যা করি dance, fashion show, melo drama এইতো নাকি?’’

বিদেশ ফেরত এই আধুনিকার কথা শুনে কেউ তেমন একটা অবাক হয়না। শুধু রাহাত বলে – “আসলে এরকম প্রোগ্রাম এ যে কি করতে হয় তাই তো মাথায় আসছেনা’’।

ঐশিঃ “না রে আমিও বুঝতে পারছিনা। কিন্তু স্যার তো আমাকেই ধরবে।

সুমনঃ “দ্যাখ এত চিন্তার কিছু নাই। তমা যে আইটেম গুলার কথা বললো সেগুলা তো আমাদের কাছে ডাল-ভাত’’।

ঐশিঃ “আরে বুদ্ধু এটা অন্যসব প্রোগ্রাম এর মতো না। ২১ শে ফেব্রুয়ারির একটা থিম তো থাকবে’’।

তমাঃ “দ্যাখ ঐশি আমরা যা পারিনা তা আমরা করতে পারবো না। Why dont you agree with us?’’

রাসেলঃ আমি তমার সাথে একমত। We gonna rock

এবার ঐশি ছাড়া সবাই রাসেলের সাথে চিৎকার করে ওঠে we gonna rock

এই চিৎকারের মাঝেই দরজায় উঁকি দেয় মাহাবুব। ওকে দেখে সবাই কেমন যেন থেমে যায়। কারণ টা বুঝতে পারে সে। প্রথম যখন সে এই ভার্সিটিতে এসেছিল তখন থেকেই ওকে খুব একটা ভালো চোখে দেখে না কেউ। প্রথম দিন পরিচিতি পর্বে ও দেখেছিল গ্রামের ছেলে বলতে ও একাই। সরকারি ভার্সিটিতে চান্স পায়নি বলে ওর মনে অনেক কষ্ট। সেটা হলে তো আর আজ ওকে এমন অবস্থায় পরতে হতনা। এইসব বড় লোকের ছেলে-মেয়েদের ভীড়ে নিজেকে খুব অসহায় লাগে ওর। বাবা তার পেনশনের সবটা টাকা তুলে তাকে ভর্তি করেছেন শুধু খুব সুন্দর একটা ভবিষ্যতের আশায়। এ কথা মনে করেই তো সে পড়ে আছে এই ইট-পাথরের জংগলে, সব অপমান মেনে নিয়ে। এই ঐশি দের গ্রুপটাকে সে একরকম এড়িয়েই চলে। কপাল খারাপ আজ। ওদের সামনেই পরে গেলো সে। মাহাবুব কে দেখলে কেনো যেন ঐশির মায়া হয়। ছেলেটাকে সবাই খ্যাত বললেও ও কখনো বলেনি। কিন্তু ওর সাথে সে মিশতেও পারেনি সেভাবে গ্রুপ এর ভয়ে। কিন্তু মন থেকে চেয়েছে ওকে অপমানিত হতে না দেখতে। মাহাবুব চলে যাচ্ছিল। এমন সময় সুমন ডেকে উঠলো ওকে।

সুমনঃ “এই যে বিদ্যার সাগর ভাই। একটু শুনবেন প্লিজ। আমরা না একটা প্রবলেম এ পরেছি। আপনি তো অনেক জানেন। আপনার জ্ঞান দিয়ে আমাদের একটু উদ্ধার করেন না প্লিজ’’।

ওর কথায় এমন একটা ব্যাঙ্গাত্নক ভাব ছিলো যে এক ঐশি ছাড়া সবাই শব্দ করে হেসে ওঠে। মাহাবুব কোনো উত্তর না দিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ায়। এবার রাসেল বলে – “ও কালা ভাই। কানে শুনেন না? নাকি বুঝেন না? কি সমস্যা? ডাকছি না। আরে ৫ মিনিট। ৫ মিনিটে আপনার পড়া মগজ থেকে আউট হয়ে যাবেনা। আসেন’’।

মাহাবুব বুঝতে পারে ও না সাড়া দেয়া পর্যন্ত এমন চলতেই থাকবে। আর আজ যদি ও চলে যায় তবে সামনে বিপদ বাড়বে বই কমবে না। আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে সে এগিয়ে যায়। ঐশি মনে মনে ভাবে “গাধাটা কেন শুধু শুধু অপমানিত হতে আসছে?’’

মাহাবুবঃ “জি বলেন সুমন ভাই। কি করতে পারি?’’

সুমনঃ “হুমম গুড বয়। পারেন পারেন। অনেক কিছু করতে পারেন তবে আপাতত আমাদের একটু আইডিয়া নিয়ে সংকট হচ্ছে। লিস্ট টা এগিয়ে দিয়ে বলে – দেখেন তো আপনার কোনো আইডিয়া আছে নাকি এ ব্যাপারে’’।

মাহাবুব একবার চোখ বুলিয়ে ভাবে কিছু না বলাই ভালো। চুপ করে থাকে সে।

সুমনঃ “কি হল sea of knowledge জীবনে দেখেছেন এইসব?’’

স্মিত হাসে মাহাবুব। তবুও কোনো কথা বলে না। এবার রাসেল শুরু করে-“আরে উনার জীবন কি উনি কালচারাল ছিলেন নাকি কোনোদিন? দেখেতো মনে হচ্ছে এখনই জিজ্ঞেস করবে ভাই এগুলা খায় না মাথায় দেয়। so funny, uncultured’’.

মাহাবুব এর মুখটা শুধু গম্ভীর হয়। তবুও চুপ করে থাকে। ঐশি আর চুপ থাকতে পারেনা। রাগত স্বরে বলে – “এ্যাই চুপ করবি তোরা? মাহাবুব আপনি চলে যান’’।

রাহাতঃ “কেনো? ও যাবে কেনো? ও এখন এখানে বসে আমাদের সাথে প্লান করবে আর আমরা দিলে সিগারেটে ২ টা সুখটান দিবে। আর যখন আমরা বলবো তখন যাবে’’। রূপা আর তমা খিলখিল করে হেসে ওঠে।

ঐশিঃ “মাহাবুব আপনি এখনই যান। এই মূহুর্তে যান। আর তোরা যদি এই ঝামেলা বন্ধ না করিস তাহলে খুব খারাপ হবে’’।

ঐশির কথায় এমন কিছু ছিলো যেটা সবাইকে চুপ থাকতে বাধ্য করে। মাহাবুব ধীর পায়ে বাইরে চলে আসে।

সুজনঃ “কিরে ঐশি তুই ওকে বাচিয়ে দিলি কেন? তোর প্রবলেম টা কি?’’

ঐশিঃ “তুই এভাবে কথা বলছিস কেন? এখানে কি তোদের ডেকেছি মাহাবুব কে নিয়ে মজা করার জন্য? এত বড় একটা ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি তার মাঝে এসব কি? আর ভাল কথা তোরাই বা ওকে এত অপমান কেন করিস? কারণ কি?’’

বাদলঃ “তুই আবার কবে থেকে ওকে লাইক করা শুরু করলি? ওকে আমাদের কারো ভালো লাগে না’’।

রাসেলঃ “ঐশি শোন! ও হচ্ছে আমাদের এন্টারটেইনমেন্ট। আর তাছাড়া ওর ড্রেস আপটা দ্যাখ’’।

সুজনঃ “আমার তো মনে হয় ওর একটাই শার্ট আর প্যান্ট’’।

সবাই হেসে ওঠে ঐশি ছাড়া।

সুমনঃ “এরকম আন স্মার্ট ছেলে আমি জীবনেও দেখিনি। কথা বলে কি ভাষায়। আমাদের language কি আর ওর কি। সেদিন শুনলাম ফোনে বলছে দোস্ত কেমন আছিস। আরে বলদ আমরা dude আর chao জেনারেশন’’।

দীপাঃ “আমিতো ওকে কোনোদিন ভার্সিটিতে কোন পার্টি এটেন্ড করতে দেখিনি। What a joker’’

বাদলঃ “আরে বাদ দে। সেদিন দেখলাম শ্যামলীর কাছের এক মেস থেকে বের হচ্ছে। ওখানেই থাকে। যার একটা মিনিমাম স্ট্যাটাস নাই সে আমাদের সোসাইটিতে কি করে?’’

রূপাঃ “যাই বলিস ঐশি এমন ছেলে এই স্টেট ভার্সিটিতে মানায় না। ওর আসলে উচিত ছিলো গ্রামের কোনো কলেজে পড়া’’।

এতক্ষন সবার কথা শুনছিল ঐশি। মেজাজ খারাপের সাথে সাথে মনটাও খারাপ হচ্ছিলো ওর। এইরকম মন মানসিকতার ছেলে মেয়েদের সাথে তার এত ক্লোজ রিলেশন কেমন করে হল ভাবতেই ওর অবাক লাগে। কিন্তু কিছুই করার নেই। এই সার্কেল থেকে যাবার শক্তি ওর নেই। ও জানে এখন কিছু করলে সব দোষ হবে মাহাবুবের। ওদের সাথে বসে থাকতেও এখন ওর খুব খারাপ লাগছে।

ঐশিঃ “ওকে guys আজ আসি। তোরা চিন্তা কর কি করা যায়। কাল আমরা প্লান টা শেষ করবো। কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বের হয়ে আসে সে’’।

ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে মাহাবুবের খুব কান্না পায়। সে জানে সে কিছুই করতে পারবে না। অনেকবার সে ভার্সিটি ছেড়ে দেবার কথা ভেবেছে। কিন্তু বাবা-মার মুখের দিকে তাকিয়ে পারেনি। হঠাৎ ওর চোখে ভাসে ঐশির মুখ। সে অবাক হয়ে ভাবে এই মেয়েটা ওদের দলে থেকেও কেনো যেন ওদের মতো নয়। সে কখনো তাকে অপমান করেনি। বরং সেদিনের মতো আজও তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। মেয়েটাকে তার অনেক ভালো লাগে। কেমন যেনো মায়া কারা চেহারা। ছি! এসব কি ভাবছে সে? বাস্তবতার মাটিতে ফিরে আসে মাহাবুব। কোথায় সে আর কোথায় ঐশি। না কোন ভাবেই এই ভাবনাটাকে প্রশয় দেয়া যাবে না। ভাবতে ভাবতেই মেসে আসে মাহাবুব। আর তখনি মোবাইল বেজে ওঠে। অচেনা নাম্বার ধরতে ওর এখনো অস্বস্তি লাগে। ফোন ধরে বলে – “হ্যালো?’’

– “মাহাবুব বলছেন?’’ একটা মেয়ে কন্ঠ শুনে আরও অপ্রস্তুত হয়।

-“জি বলছি। আপনি?’’

-“আমি ঐশি। রুমার কাছ থেকে আপনার নাম্বার নিয়ে ফোন করলাম। রাগ করেননি তো?’’

-“জি না’’। আর কোন কথা খুঁজে পায়না সে। শুধু বুকের বামপাশে একটা ধাক্কার মত অনুভূতি তাকে বিহ্বল করে দেয়।

-“আসলে আমি সরি বলার জন্য ফোন করেছি। আপনি ওদের থেকে একটু দূরে থাকবেন’’।

-“না মানে আপনি তো কিছু বলেননি। আপনি কেন?’’ আর কথা খুঁজে পায়না মাহাবুব। বুকের ধাক্কার পরিমাণ আরও বেড়েছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের অস্তিত্ব বুঝতে পারে সে।

-“জ্বি বলুন আমি কেন কি?’’

-“না কিছুনা’’। মাহাবুবের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।

-“তাহলে আজ রাখি’’। ঐশির কন্ঠে আন্তরিকতা।

মাহাবুবের মনে হয় আর একটু কথা বললে ক্ষতি কি? ও হঠাৎ বলে- “আপনারা কি কোনো প্রোগ্রাম করবেন?’’

-“হুমম। আসলে ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে। কিন্তু কিছুই মাথায় আসছেনা’’।

-“আমি কি আপনাকে কিছু আইডিয়া দিতে পারি?’’

এবার ঐশি অবাক হয়। বলে কি ছেলে? কিন্তু ওর সমস্যার সমাধান হবে ভেবে খুশিও হয়। আগ্রহ নিয়ে বলে- “কেন নয়? বলুন কি আইডিয়া দেবেন’’।

-“আসলে ফোন এ তো বুঝিয়ে বলা সম্ভব না। কাল ক্লাশ এ বলি?’’

-“হুমম’’। এক মুহুর্ত ভাবে ঐশি। তারপর বলে- “তাহলে সকাল ১০ টায় আপনি লাইব্রেরিতে থাকবেন’’।

-“জ্বি আচ্ছা। কিন্তু লাইব্রেরিতে কেন?’’ মাহাবুব না বুঝে বলে।

-“ব্যাপারটা আপনার বোঝা উচিত ছিল। ক্লাশ এ আমি আপনার সাথে কথা বলছি ব্যাপারটা ওরা ভালো ভাবে নেবে না। আর লাইব্রেরিতে ওদের দেখা পাবার সম্ভাবনা শূণ্য। আমিও খুব কম যাই’’।

-“ও আচ্ছা’’।

-“তাহলে কাল সকাল ১০টা। বাই বাই। টিসি’’। বলে ফোন রেখে দেয় ঐশি।

মাহাবুবের কানে ফোন এর কথা গুলো বারবার প্রতিধ্বনিত হয়ে আসতে থাকে। সে বুঝতে পারে নিজের অজান্তেই অনেক বড় একটা ভুল সে করে ফেলেছে। অনেক বড় ভুল।

সকালে লাইব্রেরিতে বসে ওরা। অনেকক্ষন দুজনে প্লান করে কিভাবে সুন্দর করে সাজানো যায় অনুষ্ঠান। মাহাবুবের চিন্তাধারার সাথে নিজের অনেক মিল খুঁজে পায় ঐশি। কেমন যেন নতুন করে চিনতে থাকে সে এই ছেলেটিকে। শেষ পর্যন্ত একটা খসড়া দাড় করায় ওরা। অনেক আনন্দ নিয়ে ক্লাশে ফেরে দুজন। ওদেরকে একসাথে আসতে দেখে খুবই অবাক হয় সুমন। আসার পরে জিজ্ঞেস করে – “কিরে একসাথেই আসলি নাকি?’’

ঐশি এখনই চায় না তার প্লান এর কথা সবাই যেনে যাক। বিষয়টা এড়ানোর জন্য বলে- “আরে ধূর! হঠাৎ সিড়িতে দেখা’’।

-“ও আচ্ছা’’।

-“তো তোরা কিছু ঠিক করেছিস কিভাবে কি করবো?’’

-“কি আর ঠিক করবো? রাহাত ভালো গিটার বাজায়। ওর একটা সলো থাকবে। একটা ডুয়েট গান। সাথে আমরা একটা নাটক করবো। Something funny। আর শেষে আমাদের সবার প্রিয় ফ্যাশন শো’’।

চোখ কপালে তুলে ঐশি বলে – “এখানে ২১ শে ফেব্রুয়ারি কই?’’

হঠাৎ রাসেল বলে ওঠে – “দ্যাখ তুই এতক্ষন ছিলিনা। আমরা যা ঠিক করেছি সেটাই তোকে মানতে হবে। আর 21st Feb তো থাকছে। ওটার একটা ব্যানার থাকবে তো। এটাই তো অনেক’’।

ওর সাথে তমা যোগ করে – আর যে fasion show করবো ওটাতে লাল রং মাখা ছেড়া গেঞ্জি পরানো হবে। যেটা reflect করবে i mean show করবে that day was bloody’’।

এবার সুমন বলে – “আমরা পারফরমার ও ঠিক করে ফেলেছি। তোর কোন চিন্তা নাই’’।

সবটুকু কথার মাঝে ঐশি একটা কথাও বলতে পারে না। ওর খুব কান্না পায়। সকাল কার সব আনন্দ গুলোকে কে যেনো এক নিমিষেই উড়িয়ে নিয়ে গেলো। এখন সেখানে শুধু কষ্ট আর কষ্ট।

-“এ্যাই কি ভাবছিস?’’ রাহাতের কথায় ভাবনায় ছেদ পরে ওর। – “না কিছু না’’। এবার নিজের সবটুকু মনোবল একসাথে করে শেষ চেষ্টা করে সে। – “শোন আমার কিছু ভালো আইডিয়া আছে’’।

-“কি আইডিয়া?’’ – ভুরু কুচকে জানতে চায় রূপা।

-“যেমন ধর আমরা শো শুরু করবো ২১ শের গান দিয়ে। তারপর আমরা তখনকার কিছু exclusive footage দেখাবো slide show তে। background এ একজন footage গুলোর বর্ণনা দেবে। তারপর একটা ছোট নাটক যেখানে আমরা দেখাবো যে এখনকার তরুণ সমাজ কিভাবে ইংরেজী আর হিন্দি ভাষায় অভ্যস্ত হয়ে বাংলা কে ভুলতে বসেছে। এরপর শহীদ পরিবারের কাউকে এনে তাকে সম্মাননা দেবো, তার অনুভূতি জানতে চাইবো। একটা নাচ থাকবে নজরুলের বিদ্রোহী কবিতার সাথে। শেষে আমাদের মধ্যে থেকে রাসেল বলবে এ প্রজন্মের পক্ষ থেকে শহীদদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ্তার কথা’’। এক নিঃশ্বাসে সকালে মাহাবুবের করা প্লান টা বলে একটু থামে ঐশি।

-“ব্যাস ব্যাস । stop it. enough হইছে’’। হঠাৎ রেগে ওঠে রাসেল। “কে তোরে এইসব ফালতু বুদ্ধি দিছে? সত্যি করে বলতো মাহাবুব ছাগলটার সাথে তোর কথা হইছে কিনা?’’

এবার রেগে যায় ঐশি। “হ্যাঁ হয়েছে। তাতে তোর কি? ওর প্লানটা অনেক সুন্দর। যে জিনিসটা ভালো সেটা মেনে নিতে তোর সমস্যা কোথায়?’’

-“শুধু রাসেলের না। আমাদের সবার সমস্যা আছে। খুব ঠান্ডা গলায় বলে সুমন। দ্যাখ ঐশি তুই যদি ওই বেকুবটার কথায় কান দিস then we will quit। তুই ওকে নিয়ে প্রোগ্রাম কর। আমরা নাই’’।

-“হ্যাঁ ঐশি আমরা তোর সাথে নেই’’। সাফ জানিয়ে দেয় রাহাত।

মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে ঐশির। ও জানে এদের মাঝ থেকে ও কয়েকজন কে পারফরম এর জন্য ঠিক করেছিলো। রাহাত ভালো গিটার বাজায়। রূপা সুন্দর গান গায়। তমা নাচতে পারে। আর রাসেল এর তো বক্তব্য দেবার কথা ছিল। মনে যায় হোক কণ্ঠে দৃড়তা নিয়ে বলে – “তাহলে এই তোদের শেষ কথা?’’

-“হ্যাঁ এটাই শেষ কথা’’। – তমার উত্তর।

-“তাহলে আমাকে আমার মত করতে দে যেহেতু দায়িত্ব আমার উপর’’। বলেই ওদের মাঝ থেকে উঠে যায় ঐশি।

এই ব্যাপারটা পুরো গ্রুপটাকে একটা ধাক্কা দেয়। কেউ ভাবেনি ঐশি ওদের মুখের উপর মাহাবুব নামের গেয়োটার জন্য এসব বলে এভাবে চলে যাবে। দীর্ঘ সময় চুপ থাকে সবাই। শেষে সুজন নিরবতা ভেঙ্গে বলে – “কি ভাবছিস সবাই?’’

-“না তেমন কিছুনা। ঐশি তো আর আমাদের ছাড়া অনুষ্ঠান করতে পারবে না’’। দীপা বলে ওঠে।

রাসেলঃ “হুমম চল সবাই। মাহাবুব কে একটা ডলা দিয়ে আসি’’।

সুমনঃ “না। এখন না। এটাতে ব্যাপারটা আরও খারাপ হবে। আর তাছাড়া ঐশির সাথে স্যার দের ভালো খাতির। মাহাবুব কেও সব স্যার অনেক পছন্দ করে। ব্যাপারটাকে খুব tactfully deal করতে হবে’’।

রাহাতঃ “সুমন is right। আমার মাথায় একটা প্লান এসেছে। সবাই কাছে আয়। শোন’’।

১০ মিনিট পর সবাই একসাথে হেসে ওঠে। সবার মাঝে একটা চাপা উত্তেজনা।

দীপাঃ “রাহাত you are too good। চলো আজকের সীসার বিল আমার’’।

রাত ৮ টা। লাইট নিভিয়ে শুয়ে আছে ঐশি। প্রচন্ড কষ্টে বুকের ভেতর সব দলা পাকিয়ে আসছে। ওর এতদিনের বন্ধুরা যে কেউ তার সত্যিকারের বন্ধু নয় এটা ভাবতেই আবার চোখের কোনায় পানি জমে। বার বার মনে পরছে আল-আমিন স্যার এর বলা কথা গুলো। আজ বের হয়ে আসার সময় ওর স্যার এর সাথে দেখা হয়েছিলো। স্যার ওর দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, – “তোমার আর তোমাদের 17th ব্যাচ এর উপর আমার অনেক আস্থা। আমি জানি ব্যাচ টিচার হিসাবে আমি যা আশা করি তোমরা তা পূরণ করতে পারবে। আমি যেনো তোমাদের নিয়ে গর্ব করতে পারি। অল দ্য বেস্ট’’।

কিছুই বলার সুযোগ পায়নি ও। শুধু খুব তাড়াতাড়ি –“স্যার দোয়া করবেন’’ বলেই চলে এসেছিলো ও। মাহাবুব কে ও সব বলেছে। বেচারা খুব কষ্ট পেয়েছে ব্যাপারটাতে। বলেছে ওদের কথা মত কাজ করতে। কিন্তু ঐশি মন থেকে মানতে পারেনি ব্যাপারটা। এই ভাবনার মাঝেই মোবাইল বেজে ওঠে। স্ক্রীনে সুমনের নাম।

ঐশিঃ “হ্যালো’’

সুমনঃ “হাই ডিয়ার। ভাল আছিস?’’

ঐশিঃ “কি বলবি বল’’।

সুমনঃ “অনেক রাগ করেছিস না। যাই হোক, শোন, আমরা ঠিক করেছি শুধু তোর জন্য হলেও আমরা এবার তোর কথা মত মানে মাহাবুবের প্লান মতো অনুষ্ঠান করবো’’।

ঐশিঃ “কি? কি বললি? সত্যি? ওহ সুমন। থ্যাংকস দোস্ত’’।

সুমনঃ “কি ব্যাপার? মাহাবুব তো দেখি ভালই effect ফেলেছে তোর উপর। আচ্ছা কাল দেখা হবে। বাই’’।

ঐশিঃ “বাই। আর thanx again সত্যিই তোরা আমার অনেক ভালো বন্ধু’’।

খুশিতে লাফিয়ে উঠে বসে ঐশি। সাথে সাথেই মাহাবুব কে ফোন করে জানায় সে। ওর মতো মাহাবুবও খুব অবাক হয়। পরদিন থেকে অনেক কষ্ট করে রির্হাসেল করে ওরা। মাহাবুব কে সুমনরা আর কিছুই বলেনি। ও কোনো কিছুতেই অংশ নেয়না। শুধু দূর থেকে ওদের কাজ-কর্ম দেখে। ভুল হল। দূর থেকে শুধু ঐশিকে দেখে সে। ২০ তারিখে শেষ বারের মতো রির্হাসেল করে ওরা। মাহাবুব এরই মাঝে রাসেলের বক্তব্য লিখে দিয়েছে। লেখাটা পড়ে এই প্রথম রাসেল বুঝতে পারে মাহাবুব আসলে অনেক প্রতিভার অধিকারী। এই প্রথম কেমন যেন একটা অপরাধ বোধ কাজ করে ওর মধ্যে। ২১ তারিখের কথা মনে হতেই বুকটা কেঁপে ওঠে ওর।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২। প্রভাত ফেরীতে যোগ দেয়া শেষে সবাই ভার্সিটিতে। সবাই ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে। এখন আলোচনা অনুষ্ঠান চলছে। এরপর লাঞ্চ। তারপরই ওদের অনুষ্ঠান। ঐশি কিছুক্ষন হল রাহাত কে খুঁজে পাচ্ছেনা। অথচ এই সময় ২১ শের গানের সাথে ওর টিউনিং টা খুব জরুরী। ঐশি দীপাকে ডাক দেয়। –“এ্যাই দীপা রাহাত কই গেল রে?’’

দীপাঃ “দ্যাখ আছে কোথাও’’।

ঐশি এবার তমাকে খুঁজতে থাকে। নাচের ড্রেস আনতে এতক্ষন লাগে নাকি মনে মনে বলে সে। তমাকে ফোন দেয় ও। বোকা হয়ে যায় যখন শোনে মোবাইল বন্ধ। ঐশি কিছু ভেবে পায়না। রাহাত নেই। তমার ফোন অফ। মাহাবুব কে দেখে ঐশি খুব ব্যস্ত হয়ে বলে – “মাহাবুব একটু রাহাত বা সুমন কে খুঁজে দাওনা। যাকে পাও তাকেই আসতে বলো’’।

মাহাবুবঃ “আমি তো মাত্র সুমন কে দীপার সাথে বাইরে যেতে দেখলাম’’।

ঐশি এবার সুমন কে ফোন দেয়। সুমনের ফোন ও অফ। একে একে ঐশি ওদের গ্রুপ এর সবাইকে ফোন দেয়। হতভম্ব হয়ে দেখে সবার ফোন অফ। প্রচন্ড অবাক হয়ে মাহাবুব কে বলে – “মাহাবুব ওদের সবার ফোন অফ’’।

ঐশির রক্তশূণ্য ফ্যাকাসে মুখ দেখে মাহাবুব খুব ঘাবড়ে যায়। আরও ঘাবড়ে যায় যখন শোনে সবার ফোন একসাথে অফ। আর ওরা কেউ নেই। ঐশি কোনো রকমে একটা চেয়ার টেনে বসে পরে। ফোটা ফোটা চোখের পানিতে যা বোঝার সে বুঝে নেয়। আনমনে বলে – “তোরা এইভাবে আমার উপর প্রতিশোধ নিলি। আমাকে সবার কাছে অপমানিত আর ছোট করার জন্য অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে গেলি’’।

মাহাবুব কিছু না বলে বেরিয়ে যায়। চোখের পানি ধরে রাখার কোন চেষ্টাও করেনা। সামনের দুনিয়াটা তার কাছে খুবই ঝাপসা লাগে। অনেক চেষ্টার পর ঘড়িতে যে ১২.৩০ বাজে তা দেখতে পায়। বিকেলের ট্রেনের এখনও ঘন্টা চারেক বাকি। সামনের অস্পষ্ট পথের মত জীবনটাও তার কাছে অচেনা মনে হয়। আর কোনদিন সে দাঁড়াবে না ঐশির সামনে। আর কখনও সে ফিরতে পারবেনা এই ক্যাম্পাসে। প্রবল অপরাধ বোধের আবেগ তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। সবকিছু থেকে পালিয়ে যাবার ইচ্ছা তাকে ফিরে যেতে বলে তার জগতে। হ্যাঁ সে ফিরে যাবে তার আপন ভুবনে। যে ভুবনে তাকে অপমান করার কেউ নেই। সেখানে ঝকমকে আলোর মেকি হাসি নেই। আছে জোনাকির মৃদু আলোর স্নিগ্ধতা। হয়তো নেই প্রাচুর্যের বিলাস। আছে প্রশান্তির মায়া। মেসে এসে বিছানায় বসে শব্দ করে কেঁদে ফেলে ও।

ঐশি দেখে মাহাবুব বের হয়ে গেল। কোথায় গেল ও জানে না। এখন ও কিছুই ভাবতে পারছেনা। শুধু মনে হচ্ছে এই বিশাল পৃথিবীতে কোথাও কি একটু লুকানোর জায়গা নেই ওর জন্য।

সুমনরা তখন তমাদের বাসায়।

সুমনঃ “এবার ফোনটা অন করা যায় কি বলিস। ১টা বাজে’’।

সুজনঃ “এত তাড়াতাড়ি? এখনই কি ড্রামা টা শেষ করবি নাকি?’’

রাহাতঃ “আরে না। ফোন অন থাকলেও আমরা কেউ ধরবো না। একদম শেষ মুহূর্তে ফোন ধরে ওকে আমাদের শর্ত গুলো শোনাবো। যদি রাজী হয় তাহলে আমরা যাচ্ছি। আর যদি না হয়’’-

দীপাঃ “না হয়ে আর কি কোন উপায় আছে?’’

একসাথে সবাই হেসে ওঠে।

তমাঃ “বেচারী বুঝে নাই ও কাদের সাথে লাগতে আসছে’’।

রূপাঃ “আচ্ছা রাসেল কই রে?’’

বাদলঃ “ও একটু বাসায় গেছে। চলে আসবে’’।

বাসায় যাবার পুরোটা রাস্তায় রাসেল আনমনে ভাবে -“এটা কি ঠিক হল? মাহাবুবের তো আসলে কোনো দোষ নাই। আমরা এটা কি করছি?’’ বাসায় ঢুকে ড্রেস পালটে বের হবার সময় চোখে পরে টেবিলের উপর রাখা কাগজটা। একটু হেসে পৃষ্ঠাটা তুলে নেয়। মাহাবুবের চমৎকার লেখাটা ভেসে ওঠে। এটাই তো ওর আজ পড়ার কথা ছিল। “চমৎকার লেখে ছেলেটা’’- আনমনে বলে পৃষ্ঠাটা পকেটে রাখে। তমাদের বাসায় যাবার কথা থাকলেও কি মনে করে ভার্সিটির দিকে যায় ও। ক্যাম্পাসের সিড়িতেই দেখা হয় আল-আমিন স্যার এর সাথে। অনেকগুলো মিষ্টির প্যাকেট হাতে স্যার কে দেখে বেশ অবাক হয়। অনেক কৌতুহল নিয়ে স্যারকে সালাম দেয়।

রাসেলঃ “আসসালামুআলাইকুম স্যার। হঠাৎ এত মিষ্টি?’’

স্যারঃ “ওয়ালাইকুমআসসালাম। তুমি যেন কোন ব্যাচ?’’

রাসেলঃ “স্যার আমি রাসেল। 17th ব্যাচ’’।

স্যারঃ “ওহ! 17th ব্যাচ। খুব ভালো। খুব ভালো। তোমাদের জন্য অনেক ভালো একটা খবর আছে। আমি তোমাদের পুরো ব্যাচের উপরেই খুশি, তারপরও কিছুক্ষন আগে যখন জানলাম এবারের ভিসি অ্যাওয়ার্ড টা তোমাদের মাহাবুব পাচ্ছে তখন আমি সত্যিই অভিভূত হয়ে গেছি। ছেলেটা সত্যিই জিনিয়াস। সিজিপিএ ৪ কেউ পায়নি এখন পর্যন্ত। ও অসম্ভব কে সম্ভব করেছে। ও তোমাদের ব্যাচের গর্ব। আর কালচারাল প্রোগ্রামটাও যে তোমরা খুব ভালো ভাবে করবে সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত’’।

রাসেল হতবাক হয়ে বিস্ফোরিত চোখে স্যার এর কথা শোনে। স্যার বলে যাচ্ছেন- “এজন্য আমি নিজেই পুরো ব্যাচ কে আজ মিষ্টি খাওয়াবো। ব্যাচ টিচার হিসাবে আমি তোমাদের নিয়ে অনেক আশাবাদী’’।

স্যার চলে যান। রাসেল ওখানে সিড়িতেই বসে পরে। ও বুঝতে পারে ওরা মাহাবুব কে কতটা ভুল ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। কতটা ঠুনকো ওদের আভিজাত্যের গর্ব আর স্মার্টনেস। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দুপুর ১.৩০। সময় নেই রাসেল, সময় নেই। ভিতর থেকে কে যেন সতর্কবাণী উচ্চারণ করেই যাচ্ছে। রাসেল তার চিন্তা ভাবনাটাকে একটু গুছিয়ে নেয়। মনে মনে বলে “প্রায়শ্চিত্তের এটাই শেষ সুযোগ। পারতেই হবে। পারতেই হবে’’।

মোবাইলের কর্কশ শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় মাহাবুবের। কিছুটা সময় লাগে বুঝতে সবকিছু। তারপর মনে পরে সব। ফোন এর দিকে তাকিয়ে দেখে ২৭টা মিসকল। ঘড়িতে ৬টা বাজে। শেষ ফোনটা ছিল ঐশির। সাথে সাথে তার মনে পরে আজকের অনুষ্ঠানের কথা। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল সে নিজেও জানেনা। বাড়িতে যাবার কথা থাকলেও এখন আর ট্রেনে যেতে পারবে না সে। ভাবতেই খারাপ লাগে। টাকা বেশি খরচ হবে বাসে যেতে। হঠাৎ দরজায় প্রচন্ড জোরে কড়া নাড়ার শব্দ শুনে লাফিয়ে ওঠে ওর হৃৎপিন্ড। দরজা খুলে স্ববিস্ময়ে দেখে রাসেল, বাদল, দীপা আর সুজন দাঁড়িয়ে আছে। এরপর যা শোনে তাতে সে আরও হতভম্ব হয় যখন রাসেল বলে – “ভাই রেডি হয়ে নেন। কুইক। একদম সময় নাই’’। মাহাবুবের মনে হয় আবার কি খেলা শুরু করছে ওরা। আমতা আমতা করে বলে, – “রেডি মানে?’’

সুজনঃ “দেখেন ব্রাদার অত কিছু বুঝানোর সময় নাই। জাস্ট শার্টটা ঠিক করে ইন করে চোখে মুখে পানি দিয়ে আসেন। পরে সব বলছি’’।

মাহাবুব যন্ত্র চালিতের মত ওদের সাথে বের হয়। গলির মাথায় একটা গাড়ি দাঁড়ানো। ও জানে না কার। গাড়িতে উঠেও ও কিছু জানতে চায়না। ওর মাথায় সবকিছু উলটাপালটা লাগে। ওরাও কোনো কথা বলে না। শুধু মাহাবুব শোনে রাসেল কাকে যেন ফোন করে বলে আমরা আসছি। গাড়ি যখন ক্যাম্পাসে তখন ৬.২০। মাহাবুব কে নিয়ে ওরা ক্যান্টিনে ঢোকে। এখানেই অনুষ্ঠান হচ্ছে বুঝতে পারে মাহাবুব। ঘোর লাগা চোখে ও দেখে স্টেজে ঐশি আর সুমন। ওরা উপস্থাপনা করছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই ও শোনে ঐশি বলছে-

ঐশিঃ “সুধীবৃন্দ ২১ শের কাছে আমাদের অনেক ঋণ। অনেক দেনা সেই বীর শহীদদের কাছে যাদের অবদান জাতি হিসাবে আমরা কখনও ভুলবো না। সেই ২১শের চেতনা নিয়ে নবীন প্রজন্মের ভাবনা উপস্থাপনের জন্য আমন্ত্রন জানাচ্ছি 17th ব্যাচের মাহাবুব আলম কে’’।

মাহাবুব নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকে। দীপা পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে বলে, -“যাও না তোমাকে ডাকছে তো’’। বাদল ওর হাত ধরে একটু আগিয়ে দেয়। আর যাবার সময় রাসেল ওর হাতে ধরিয়ে দেয় ওরই লেখা পৃষ্ঠাটা। মুখে বলে – “বেস্ট অফ লাক’’।

ধীর পায়ে স্টেজে উঠে মাহাবুব। ইতস্তত ভাবে ডায়াসের পিছনে দাঁড়ায়। ওর মনে পরে স্কুলের উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগীতার কথা। সব ভুলে মাহাবুব শুরু করে।

এরপর কিভাবে সে শেষ করে তা সে নিজেও জানে না। হাততালির শব্দে কেঁপে উঠে পুরো ক্যান্টিন। ভিসি স্যার এসে ওর পাশে দাড়ান। ঘটনার আকস্মিকতায় স্যার কে সালাম দিতেও ভুলে যায় ও।

ভিসি স্যারঃ “মাহাবুব মঞ্চে থাকতে থাকতে আমি এবারের ভিসি অ্যাওয়ার্ড, ২০১১ বিজয়ীর নাম ঘোষণা করছি। সিজিপিএ ৪ পেয়ে এবার সব বিভাগের স্টুডেন্টদের পিছনে ফেলে ভিসি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী হয়েছে, মাহাবুব আলম, 17th ব্যাচ, ফার্মেসি বিভাগ’’।

তুমুল করতালিতে আবার মুখরিত হয় পুরো ক্যান্টিন। মাহাবুব ঘোরের মধ্যেই নেমে আসে সার্টিফিকেট হাতে। ভাবে হয়তো এখনই এই স্বপ্নটা ভেঙ্গে যাবে। ও নেমে আসার পর প্রথম ওর দিকে এগিয়ে আসে ঐশি। ওর চারপাশে সুমন, রাসেল, বাদল সহ সবাই। আবছা আলো-আধারেও মাহাবুব বুঝতে পারে ঐশি কাঁদছে। একে একে ওকে বুকে টেনে নেয় সুমন, রাসেল, বাদল, রাহাত আর সুজন। তমা, দীপা আর রূপা এসে হাত মেলায়। হঠাৎ রাসেল বলে ওঠে-

“আমরা তাদের সাথে আর বেঈমানী করতে চাইনা যারা শুধু আমাদের কথা বলার অধিকারের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আমরা তাদের ত্যাগের কোনো মূল্য দিতে পারবো না জানি। শুধু সেই ত্যাগের কাছে মাথানত করে প্রতিজ্ঞা করছি যে, সব ভাষার উপরে বাংলাভাষাকে জীবনে অগ্রাধিকার দেব সবসময়’’।

মাহাবুব হাসে। বলে – “আপনি তো মুখস্ত করে ফেলেছেন দেখছি’’।

সুজনঃ “নো আপনি। থুক্কু আর আপনি নয়। তুমি। এখন থেকে তুমি আমাদের পথ-প্রদর্শক’’।

সুমনঃ “হ্যাঁ দোস্ত মাফ করে দিও। তবে সবার আগে ঐ যে পাগলীটা ওখানে একা দাঁড়িয়ে কাঁদছে ওর কাছে যাও। আর খাওয়াটা কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি চাই’’।

মাহাবুব হেসে এগিয়ে যায়। এই পদক্ষেপ এক নতুন পথ চলার, এক নতুন প্রতিজ্ঞার।

latest video

news via inbox

Nulla turp dis cursus. Integer liberos  euismod pretium faucibua

Leave A Comment