তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে
মানুষ আসে, মানুষ চলে যায়। বেশীরভাগ মানুষ চলে যায়, সমাজ ও জাতীয় জীবনে কোন ছাপ না রেখে। খুব অল্প কিছু মানুষ, হাতে গোনা কিছু চরিত্র থাকে যারা তাঁদের ছাপ রেখে যায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। তুমি আজ চলে গেছো। সময়ে না অসময়ে সে তর্কে যাবো না। তোমাকে একদিন চলে যেতেই হতো। কিন্তু তুমি কি আসলেই চলে গেছো? চলে যেতে পেরেছো?? না, পারোনি। কিভাবে তুমি যাবে বলো??? কোথায় যাবে বলো?? আজ দেশে এমন কোন মানুষ পাওয়া যাবে না যার মনে তুমি বাস করছো না। এমন কোন বাসা পাওয়া যাবে না যেখানে তোমার কাগুজে অস্তিত্ব নেই। এমন পড়ার টেবিল নেই যে টেবিলে তোমার সৃষ্টির স্থান একদিনের জন্য হলেও হয়নি। তুমি আছো। তুমি থাকবে। অনন্তকাল থেকে যাবার সব আয়োজন যে তুমি করে রেখে গেছো!
আমি তখন ছোট। অল্প স্বল্প বোঝার বয়সে, কোন এক ছুটির দিনে তুমি আমায় ডেকেছিলে। সেই যে তোমার ডাকে সাড়া দিলাম, আজ অবধি সেই ডাকটাই শুনতে পাই। বইমেলায় তুমি আমাকে ডেকে যাও। নীলক্ষেতের ফুটপাতের দোকান থেকে শুরু করে অভিজাত লাইব্রেরি সবখানেই তুমি আমাকে ডাকো। ডাকতেই থাকো। এখন হ্যাটফিল্ডের এক ছোট্ট রুমে বসেও আমি তোমার ডাক শুনতে পাচ্ছি। দেশ থেকে আসার আগে আর কোন বই না আনলেও তোমার ২টা বই সাথে করে আনতেই হলো যে।
অনেকেই তোমার সমালোচনা করেন। ভবিষ্যতেও করবে। তাঁদের ভাষায় তুমি ঠিক উঁচু মাপের সাহিত্যিক নও। তোমার লেখার আবেদন ক্ষণস্থায়ী, উচ্চ সাহিত্যমান বর্জিত। আমি সাহিত্য বুঝি না। সাহিত্যমান বুঝিনা। আমি মানুষের শরীর বুঝি আর খানিকটা বুঝি তার মন। সেই জ্ঞানটুকু নিয়েই বলছি, সেই সামান্য বোঝার ক্ষমতা নিয়েই বুঝতে পারছি আজ জাতি কাঁদছে। আজ দেশের অসংখ্য পাঠক-পাঠিকা তাদের স্বপ্ন দেখানোর কারিগর হারিয়ে কাঁদছে। বোহেমিয়ান যুবকেরা কান্না চেপে, শূন্য চোখে তাকিয়ে আছে অসীম আকাশে, তোমার চলে যাবার পথে। প্রচন্ড আবেগী কোন তরুণী, যার ঘুম না আসা প্রতিটি রাতের সাথী তুমি, সেও আজ চোখের জলে ভাসছে। আর তুমি??? আচ্ছা, আজ কি তোমার ওখানে পূর্ণিমা?? অথবা বৃষ্টি?? প্রকৃতির এই দুই মায়াময় রূপ তোমার অত্যন্ত প্রিয় ছিলো যে। তোমার সেই প্রিয় বিষয়টা তুমি ঢুকিয়ে দিয়েছো আমার মত লক্ষ-কোটি পাঠকের মনে। কিন্তু ভেবে খুব কষ্ট হয় যখন দেখি তুমি তোমার জীবনের শেষ কটা দিনে তুমি উপভোগ করতে পারলে না তোমার প্রিয় স্বদেশের বৃষ্টির গান, মাটির গন্ধ, বাতাসের শিহরণ। সবার মনে প্রকৃতি প্রেম জাগিয়ে তুমি নিজেই বিরহী থেকে গেলে। তোমার সেই বিরহের, সেই কষ্টের খোঁজ কি সবাই পেয়েছে??
আর আমি?? তোমার নিমন্ত্রনে সাড়া দিয়ে ফেলা অগণিত পাঠকের মত আমিও ভাবছি তুমি আমাদের ছেড়ে ভালো আছো তো? তোমার সৃষ্ট কোন চরিত্রকে তোমার লেখনিতে চূড়ান্ত পরিণতি দান করে তুমি হয়তো কখনো হেসেছো- সার্থকতার হাসি। আজ বিধাতা সেই সার্থকতার হাসি হাসছে কিনা আমি জানি না। জীবন আর মৃত্যুর রহস্য নিয়ে তোমার অনেক আগ্রহ ছিলো। অনেক প্রশ্ন ছিলো। আজ সেই প্রশ্নের উত্তরগুলো কি পেয়েছো?? আমরা একটা প্রশ্নের উত্তর কিন্তু পাইনি। আমাদের সবাইকে ছুটির নিমন্ত্রণে ডেকে এনে তুমি কেন জীবন থেকে এত লম্বা ছুটি নিলে??? আর একটি বার বলে যাবে কি???
editor's pick
latest video
news via inbox
Nulla turp dis cursus. Integer liberos euismod pretium faucibua