কোলন ক্যান্সার- আমরা কি সচেতন?
হুমায়ূন স্যার চলে গেছেন অন্যভুবনে গত পরশু। সমগ্র জাতি শোকাহত। আমাদের প্রাণপ্রিয় কথার জাদুকর আর তাঁর কথার জাদুতে কোটি কোটি ভক্তকে বিমোহিত করবেন না। হিমু পাগলামী করবে না, মিসির আলী রহস্য খুঁজবে না, আমরা তাঁর বই পড়ে বা ছবি দেখে চোখের জলে ভাসবো না। তাঁর কলম থেমে গেছে। কিন্তু আমাদের জীবন থামেনি। সামনে আমাদের এগিয়ে যেতেই হবে। তাঁর এই মৃত্যু শোকের সাগরে ভাসানোর সাথে সাথে আমাদেরকে একটু খানি সচেতন হবার কথাও বলে যায়। আমরা কি নিজেদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন?? যদি না হয়ে থাকি তাহলে নিচের কথা গুলো জেনে কি নিজেদের একটু সচেতন করে তুলতে পারি না?
বর্তমান বিশ্বে জীবনধারা ও খাদ্যাভাস পরিবর্তনের সাথে সাথে ক্যান্সারের প্রকোপ অনেক বেড়ে গেছে। ক্যান্সার অনেক ধরনের হয়, অনেক প্রকারের হয়। সবকিছু নিয়ে আলোচনা এখানে সম্ভব না। আসুন আমরা কেবল কোলন ক্যান্সার নিয়ে একটু খানি জানি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার হিসাবে কোলন ক্যান্সার ৪র্থ স্থান দখল করে আছে। রেটিং অনু্যায়ী এর আগে আছে শুধু ফুসফুস, পাকস্থলী আর লিভারের ক্যান্সার। সারাবিশ্বে প্রতিবছর ১০ লাখের ও বেশী মানুষ এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে অর্ধেকই বছর পেরুবার আগেই মৃত্যু বরণ করে। এর অন্যতম প্রধান কারণ ঠিক সময় মত রোগ নির্ণয়ে ব্যর্থতা। যদিও কোলন ক্যান্সারকে উন্নত বিশ্বের রোগ বলে ধরা হয় আজও তবে ইদানিং আমাদের দেশেও এর প্রকোপ বেশ ভালোই দেখা যাচ্ছে। সুতরাং সাবধান হওয়া খুব জরুরী। আসুন এবার একটু সাবধান হই।
একটু সংক্ষেপে বলে ফেলি কোলন ক্যান্সার বলতে কি বুঝায়। সাধারনভাবে আমরা জানি যে আমাদের পাকস্থলীর পরে খাদ্য পরিপাক, শোষণ ও বর্জ্য ত্যাগের জন্য আরও দুটি অঙ্গ আছে। একটি হলো ক্ষুদান্ত্র আর অন্যটি বৃহদান্ত্র। কোলন বৃহদান্ত্রের একটি অংশ। আপাতত এর থেকে বেশী পরিচয় জানাতে চাচ্ছিনা। কারণ এই লেখাটার উদ্দেশ্য এনাটমি শিখানো নয় বরং কিছু সচেতনতামূলক তথ্য দেওয়া। উৎসাহী পাঠক আরো জানতে চাইলে এই লিংকে যেয়ে জানতে পারেন। যেটা বলছিলাম। এখন কোলনে বা বৃহদান্ত্রের যেকোন অংশে ক্যান্সার বা এ জাতীয় কিছু হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন?? পাঠক এবার কষ্ট করে একটু বেশী মনযোগ দিতে হবে। পড়ার সাথে সাথে নিজের পরিচিত মানুষের মুখগুলোকে মনে করুন আর দেখুন সব ঠিকঠাক আছে কি না।
১ম কথা, আপনার বয়স। ৬০ বছরের উপরে কি??? অথবা আপনার পরিচিত কারো বয়স কি ৬০ এর উপরে? কেন বললাম?? কারণ হলো ৬০ বছরের বেশী বয়সের মানুষদের কোলন ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশি। এর মানে কিন্তু এটা না যে ৬০ বছরের বেশি হলেই আপনার এই ক্যান্সার হবে। এর মানে হল যাদের কোলন ক্যান্সার হয় পরিসংখ্যান বলে তাদের বেশির ভাগের (৮০ভাগ) বয়স ৬০ এর উপরে। তার মানে বয়স একটা ব্যাপার হচ্ছে।
২য় কথা হলো, পারিবারিক ইতিহাস। কারো পরিবারে যদি এই রোগে আক্রান্ত হবার ঘটনা থেকে থাকে তাহলে তার সাবধানে থাকার দরকারটা অনেক বেড়ে গেলো।
৩য় যে ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ তা হল আপনার খাদ্যাভাস। কেন বলছি তার কারণ হল বর্তমানে আমরা শাকসব্জি খাওয়াটা অনেক কমিয়ে দিয়েছি। আমাদের অনেকের খাবার তালিকার নিত্যদিনের উপকরণ হল মাংস। এই যে অভ্যাস এটার সাথে কোলন ক্যান্সারের কেমন যেন একটা বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক আছে। অত্যধিক মাংস, অধিক চর্বিযুক্ত খাবার, জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যাস কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় অনেকখানি। ব্যাপারটা এমন না যে আপনার বয়স ২৫ বছর, আপনি এখন এধরনের খাবার বেশি খাচ্ছেন আর আপনার এখনি ক্যান্সার হবে। সমস্যাটা শুরু হবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে। এবার আপনার দৃষ্টি আকর্ষন করছি আপনার খাবার প্লেটের দিকে। তাকিয়ে দেখুন অথবা ভেবে দেখুনতো তিনবেলা খাবারে তালিকায় কতটুকু ফাইবার আর ফল থাকল। যদি একেবারেই না থাকে তাহলে দয়া করে কাল থেকেই যোগ করা শুরু করুন। কারণ এগুলো কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে বলে কিছু কিছু গবেষনায় দেখা গেছে।
এখন ৪ নাম্বারে যা বলব তা দুনিয়ার সব মানুষ জানে। আপনিও জানেন। কিন্তু জেনে শুনেও ভুল করেন। আমার মনে হয় মানুষই একমাত্র প্রাণী যে জেনে শুনে ভুল করতে পছন্দ করে। আবার সেই ভুলটাও করে আনন্দচিত্তে। জ্বী, আপনি ঠিক ধরেছেন আমি সিগারেটের কথা বলছি। সিগারেটের সাথে কেন জানি না সব ধরনের ক্যান্সারের একটা গলায় গলায় ভাব আছে। তারপরও আমরা ধূমপান করি। সম্ভব হলে আজ থেকে- না আজ থেকে না, কাল থেকে ধূমপান ত্যাগ করুন। আজ রাতের সিগারেটটাই হোক আপনার শেষ সিগারেট।
৫ম কথা হল শারীরিক পরিশ্রম। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে আমরা চরমভাবে অলস হয়ে যাচ্ছি। শারীরিক পরিশ্রম কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এটা আমার কথা নয় জনাব- বিশেষজ্ঞ মতামত। সুতরাং একটু হাটার অভ্যাস করুন।
এতক্ষন যা বললাম এগুলা সব কোলন ক্যান্সার এর রিস্ক ফ্যাকটর। এবার আসেন কিছু লক্ষনের কথা বলি।
১. তলপেটে চাপা ব্যাথা। বিশেষ করে যেকোন একদিকে। ব্যাথার ইতিহাস দীর্ঘদিনের হলে ডাক্তার দেখান।
২. পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া- এক্ষেত্রে বলবো পাইলসের কারণেও পায়খানার সাথে রক্ত যেতে পারে। তবে সেটাকেও অবহেলা করবেন না। কারণ পাইলসের কারণে কোলন ক্যান্সার না হলেও রেকটাল ক্যান্সার হতে পারে। আর এই পাইলসের ব্যাপারে আমাদের কেন যেন একটা লজ্জা বা দ্বিধা কাজ করে। বিশেষ করে মেয়েদের। আরে রোগ তো রোগই তাই না। আপনার জন্য বলবো- রোগের কাছে লজ্জার কোন স্থান নাই। আর একটি কথা। যদি দেখেন বেশ কিছুদিন যাবত ক্রমাগত কালো পায়খানা হচ্ছে (কোন মেডিসিন খাওয়া ছাড়া) তবে ধরে নেবেন ডাক্তারের সাথে কথা বলার সময় হয়েছে।
৩. হঠাৎ করে যদি দেখেন পায়খানা এই কষা আবার এই তরল হচ্ছে তাহলে গুরুত্ব দিন। বুঝাতে চাচ্ছি যে আপনার স্বাভাবিক পায়খানার যে অভ্যাস সেটা যদি হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলে ডাক্তার এর সাথে কথা বলেন। আর অবশ্যই মনে রাখবেন ক্রমাগত কষা পায়খানা কিন্তু পাইলস ও ক্যান্সারের জন্ম দিতে পারে আবার এর লক্ষন হিসাবেও প্রকাশ পেতে পারে।
৪. কোন কারণ ছাড়া ওজন হ্রাস পাওয়া। আবারো বলছি কোন কারণ ছাড়া ওজন হ্রাস পাওয়া। এটা আসলে সব ধরনের ক্যান্সারেরই একটা প্রাথমিক লক্ষন। দেরী না করে একবার নিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেই নিন না।
এতক্ষন যা বললাম, যে তথ্যগুলো দিলাম একটু মিলিয়ে দেখুন পরিচিত কারো মাঝে খুঁজে পান কিনা। যদি পান তাহলে আর দেরী না করে একবার ডাক্তারের কাছে যান। অবহেলা জিনিসটা আমরা খুব ভালো পারি (নিজেদের ক্ষেত্রে)। দয়া করে এব্যাপারে অবহেলা করবেন না।
চিকিৎসা কি হওয়া উচিত তা বলার সাহস করলাম না। কারণ এজন্য আমার চেয়ে অনেক ভালো এবং বিজ্ঞ ডাক্তাররা আছেন। তবে বিদেশে পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি যে আমরা জাতি হিসাবে নিজেদের অবহেলা করতে খুবই ভালোবাসি। আমরা ভুলে যাই যে জীবনযাত্রায় শুধুমাত্র সামান্য কিছু পরিবর্তন আমাদেরকে অনেক ভালো রাখতে পারে। হাজার হোক আমার সাথে আপনার সাথে আমাদের পরিবারের সুখ-দুঃখ যে নিবিড় ভাবে জড়িত।
সবাই ভালো থাকবেন এই দোয়া থাকল।
editor's pick
latest video
news via inbox
Nulla turp dis cursus. Integer liberos euismod pretium faucibua