কিছু কাল্পনিক কথোপকথন
১
-হ্যালো, হ্যালো! রিয়া??
-কে?? হুজ দিস??
-রিয়া, আমি মুনা।
-ওহ। হ্যাঁ মুনা বল
-দোস্ত খবর শুনেছিস? হাইকোর্ট নাকি সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে।
আরে এটাতো অনেক আগের খবর।
-আসলে আমি ফোন করেছিলাম এটা জানার জন্য যে আংকেল তো অনেক বড় পোস্টে আছেন সচিবালয়ে, তুই আসলে কি হবে জানিস কিছু? সরকার কি সিদ্ধান্ত বদলাবে???
-আরে ধুর! সরকার কেন সিদ্ধান্ত বদলাবে। মনে হয় না কিছু হবে।
-দোস্ত! তাহলে আমার কি হবে। এত কষ্ট করে পড়াশোনা করলাম। মেডিকেলে পড়ার খুব ইচ্ছা ছিল। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।
-আরে তোর চিন্তা কি?? এবার গোল্ডেন পেয়েছিস।
-আরে গোল্ডেন পেয়েছি বলেই তো আর চান্স শিওর না। শুনেছি এখানে অনেক ধরাধরি হবে। আমার তো বলার মত কেউ নেই।
-হুম। আমি অবশ্য বাপি-কে বলেছি। দেখি বাপি কাল কথা বলবে বলেছে।
-ইয়ে, মানে রিয়া, তুই কি একটু আমার জন্য বলতে পারবি আংকেল কে। প্লিজ দোস্ত আমার জন্য এটুকু কর। আমার খুব কান্না পাচ্ছে। বাব-মার খুব ইচ্ছা ছিল আমি ডাক্তার হবো।
-ইয়ে মানে মুনা, বাপি ডাকছে রে। এখন রাখি। পরে এব্যাপারে কথা হবে। বাই।
২
-আব্বু
-কি মা?
-আব্বু, তোমার কি উপরের লেভেলে কারো সাথে পরিচয় আছে? মানে সুপারিশ করার মত?
-নারে মা। আমি সামান্য শিক্ষক মানুষ। আমার কারও সাথে তেমন পরিচয় নেই। তুই কি মেডিকেল নিয়ে বেশী চিন্তা করছিস?
-হ্যাঁ বাবা। সরকার নাকি সিদ্ধান্ত বদলাবে না। আর সবাই বলছে এবার মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে অনেক ধরাধরি হবে। বাবা, আমারতো মনে হয় মেডিকেলে পড়া হবে না।
-আমি কী বলবো রে মা। কপালে থাকলে হবে। তাও আমি দেখি ধরাধরি করার মত কাউকে পাই কিনা। তুই মন খারাপ করিস না মা। একি?? কাদছিস কেন পাগলী??
-আব্বু, আমার খুব খারাপ লাগছে আব্বু। অনেক অ-নে-ক কষ্ট হচ্ছে।
-কাদিস না মা। সবার কপালে সব কিছু থাকেনা।
-তোমার চোখে পানি কেন আব্বু?? আচ্ছা দেখো আমি আর কাঁদছি না। তুমি কেঁদো না বাবা।
৩
-বাপি? ওহ বাপি, ম্যাগাজিনটা রাখো না।
-ইয়েস মাই ডিয়ার। বল কি হয়েছে??
-আচ্ছা বাপি, আমি তো এবার এ প্লাস পেয়েছি। আর এসএসসিতে শুধু এ। মেডিকেলেতো আবার ভর্তি পরীক্ষা হবেনা। তাহলে আমার কি হবে, বাপি?
-আরে? কি হবে মানে? তোমার বাপি আছে কেন?? আমি কালকেই আবুলকে ফোন দিবো। কোন চিন্তা করো না ডিয়ার। জাস্ট চিল।
-ওহ বাপি! ইউ আর সো সুইট। বাপি, চলো আজ বাইরে খাই।
-হুম। ওকে। গেট রেডি দেন।
৪
-হ্যালো, আপনি কি জনাব আবুল সাহেবের পিএস বলছেন??
-জ্বী না, আমি উনার পিএস এর পিএস বলছি। কি দরকার বইলা ফালান।
-না, মানে আমি আসলে
-আরে, এত আমি, আসলে করতেছেন ক্যান??? সোজা কামের কথায় আসেন। মেডিকেলের লাইগ্যা ফোন দিছেন??
-জ্বী, জ্বী ! আপনি ঠিক ধরেছেন।
-জিপি কত??
-জিপি মানে?? আপনি কি জিপিএর কথা বলছেন?
-ঐ হইলো। কত?
-জিপিএ তো এ প্লাস। তবে দুটা গোল্ডেন না। এসএসসিতে খুব শরীর খারাপ ছিল বলে গোল্ডেন পায়নি।
-ধুর মিয়া। সোনাগুলা নিয়াই ভেজালে আছি। আপনে তো সোনাও পান নাই।
-জ্বী মানে আমি তো না। আমার মেয়ে।
-ঐ হইলো। সরকারীতে হবে না। বেসরকারী মেডিকেলে চেষ্টা করতে পারি। তয় খরচা বেশী পড়বো।
-মানে বলছিলাম কি যে, সরকারীতেই যদি একটু দেখতেন। বেসরকারীতে পড়ানোর ক্ষমতা নাই আমাদের।
-বলেন কি?? আপনি কি করেন আগে এইডা বলেন।
-জ্বী, আমি একজন শিক্ষক।
-ও। বুঝছি। তাইলে ভাই চেষ্টা কইরেন না। অনেক টাকার মামলা।
-কেন ভাই? ২-৩ লাখেও কি হবে না??
-হা হা হা। ধুর মিয়া। আপনার কোন আক্কেলই নাই। এইবারের রেট কত জানেন?? এইবারে সরকারী মেডিকেলের রেট হলো ১০- ২০ লাখ। বেসরকারি ৫-১০, সাথে বেসরকারি মেডিকেলের নিজের ফি তো আছেই।
-ওহ। ঠিক আছে ভাই। ধন্যবাদ।
৫
-হ্যালো, স্লামালাইকুম স্যার।
-জ্বী, আমজাদ সাহেব। কেমন আছেন বলেন?
-স্যার, সবই আপনাদের দোয়া। আপনার শরীরটা ভালো তো স্যার?
-আর বলেন না, এই পোলাপান গুলা কি সব মানব-বন্ধন টন্ধন করতেছে। কেমন লাগে বলেন। ওদিকে ম্যাডাম আবার বলতেছেন সিদ্ধান্ত যেন ঠিক থাকে।
-স্যার, আপনি চিন্তা করেন না। কয়েকদিন পর এমনিতেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এছাড়া আমরা তো আর বসে নেই। আমরাও সরকারী সিদ্ধান্তের পক্ষে মিছিল করার লোক লাগিয়ে দিয়েছি।
-তা অবশ্য ঠিক বলেছেন।
-স্যার, এবার একটা অনুরোধ ছিল।
-বলে ফেলেন।
-স্যার, আমার মেয়েটাকে কিন্তু ঢাকা মেডিকেলেই রাখতে হবে। ও এবার এ প্লাস পেয়েছে কিন্তু এসএসসিতে নরমাল এ।
-তাহলে তো একটু কেমন হয়ে গেলো না?
-স্যার, কি যে বলেন? আপনার কাছে এগুলো কোন ব্যাপার নাকি? আপনি শুধু বলেন বাকিটা আমি কালই ব্যবস্থা করে ফেলবো।
-হে হে হে। আপনি সাথে সাথেই বুঝে ফেলেন ভাই। যাই হোক সময়মত আমাকে একটু মনে করিয়ে দিয়েন। আর কাল একজন ঠিকাদার পাঠাবো আপনার কাছে। কাজটা দিয়ে দিয়েন। সে আবার আমার শালার শালা হয়। হা হা হা।
-হা হা হা। শালার শালা। খুব কাছের সম্পর্ক স্যার। আপনি চিন্তা করেন না। ওটা আমি দেখছি।
পরিশিষ্টঃ
কথোপকথন লেখার একটা সমস্যা হলো আবেগ দেয়া যায় না। শুধু সংলাপ বলে যেতে হয়। তবে মাঝে মাঝে সংলাপে লুকিয়ে থাকা আবেগটাকে ধারণ করার মত যোগ্যতা লেখকের থাকেনা। আমিও সে যোগ্যতা রাখিনা। শুধু হতাশা আর কষ্টের হাহাকারের উষ্ণতাটা টের পাই। লেখার সময় নিজের জীবনের সেই দিনগুলো মনে পড়ে গেলো। কত চোখের পানি ঝড়ালে আজকাল উচ্চশিক্ষার সিড়িটা পাওয়া যায়???
editor's pick
latest video
news via inbox
Nulla turp dis cursus. Integer liberos euismod pretium faucibua