এ লজ্জা রাখি কোথায়

Published On: May 18, 2012By Tags: , Views: 62

গত কয়েক দিন ধরে পত্রিকার পাতায় একটা খবরে বারবার চোখ আটকে যাচ্ছে। বেসরকারী শিক্ষকরা তাদের চাকুরী নিয়মিতকরন সহ আরো কিছু দাবিতে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে নির্মম ভাবে লাঠিপেটা হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন আহত শিক্ষক পরে নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেছেন যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বাব-মা দুজনেই শিক্ষক বলে কিনা জানি না খবরটা দেখার পর থেকেই মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে। তবে এখন মনে হচ্ছে আরে এটাই তো স্বভাবিক। বাংলাদেশে তো এটাই ঘটা উচিত। সুশীল সমাজ ও তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা এখন মুখে তালা লাগিয়ে বসে আছে। বিরোধীদলের মুখেও কোন কথা নেই। থাকবেই বা কেন? এই শিক্ষকরা কারা? তারা সমাজের চোখে সব থেকে মহৎ কিন্তু সব থেকে অবহেলিত পেশার মানুষ। তারা তো কেউ আর ইলিয়াস আলী নন, তারা কেউতো আর প্রভাবশালী মন্ত্রীর ভাতিজা-ভাগ্নে নন। তারা কেন আমাদের চিন্তা-চেতনায় আসবেন? তারা কেন বুদ্ধিজীবিদের কলামে আসবেন? তারা থাকবেন ভাংগা স্কুল ঘরের বারান্দায়, ক্লাশরুমে, করিডোরে। আর যেখানে ক্লাশরুম নেই সেখানে গাছতলায়। তারা টিনের চালের ফুটো দিয়ে টুপটাপ করে পড়া বৃষ্টির পানি মাথায় করে শিক্ষাদানের মত মহৎ কাজ করবেন। সেই বৃষ্টির পানির সাথে মিশে যাবে তাদের শরীরের নোনা ঘাম কিংবা চোখের পানি। বেলা শেষে ক্লান্ত পায়ে গ্রামের বাজার ঘুরে অতিকষ্টে দুটো পচা মাছ অথবা তরকারী কিনে বাড়ীর পথ ধরবেন। বাসায় ফিরে ছেলে মেয়েদের শখের  জিনিস না আনতে পারার কষ্ট লুকাবেন ধমকের সুরে কথা বলে। মাস শেষে বেতন না পেয়ে স্ত্রী-র অতি সখের নাকফুল বিক্রি করবেন অথবা বন্ধক রাখবেন পেটের দায়ে। সারাটা বছর অন্যের সন্তান মানুষ করতে যেয়ে ভুলে যাবেন নিজের সন্তানের ভবিষ্যত। জীবনের শেষ বেলায় এসে চাকুরী হারানোর শংকায় পড়বেন।

অথচ তাদের হাতে মানুষ হয়েই আজ অনেকে ক্ষমতার গদিতে বসে পা দুলাচ্ছেন আর তামাশা দেখছেন। আমাদের মন্ত্রী মহোদয়গন অশিক্ষিত কিনা জানি না তবে শিক্ষিত যে না এটা আজ বুঝতে পারছি। যদি শিক্ষিত হতেন তাহলে অন্তত শিক্ষকদের মর্যাদাটা একটু বুঝতেন। আজ তাদের সামনেই যখন অমানুষগুলো সম্মানিত শিক্ষকদের গায়ে লাঠির বাড়ি দেয় তখন কি তাদের একবার নিজের শৈশব চোখে ভেসে ওঠে না?

দেশে আজ এ প্লাসের রেকর্ড হচ্ছে। প্রতি বছর শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা মাইল ফলক পার হয়ে কিলোমিটার ফলকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষা ক্ষেত্রে এই ব্যাপক উন্নয়নের জন্য সরকার অনেক কৃতিত্ব দাবি করে। অথচ এর নেপথ্য কারিগর দের কপালে জোটে লাঠির বাড়ি। আমরা কি আসলেই সভ্য জাতি? আমাদের দেশে কি মানুষ সরকার চালায়? আমাদের দেশে কি আদৌ সরকার আছে? আছে তো। সরকার আছে শেয়ার বাজার লুটেরাদের বাঁচাতে। সরকার আছে পদ্মা সেতুতে দূর্নীতির কালিমা ঢাকতে। সরকার আছে তাবেদার, চাটুকার আর লুটেরাদের পক্ষে।

এইসব অসহায় শিক্ষক যারা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সরকার তাদের চোখে দেখে না। কোথাও তাদের পক্ষে বলার কেউ নেই। ফেসবুকেও এর কোন প্রতিবাদ কেউ করলোনা। অথচ এক বার্সার খেলার আপডেট দিতে আমরা কত ব্যস্ত। মেসি না রোনালদো সেই তর্কে আমাদের দিন গুজরান, আমরা হয়রান, পেরেশান। মেয়েদের ওড়না বুকে নাকি মাথায় থাকা ভালো এই নিয়ে আমাদের চিন্তার শেষ নেই। আসলে আমরা একটা কুলাংগার জাতি। যাদের মধ্যে দেশপ্রেম, মানবিকতা আর সম্মানীয় কে সম্মান দেখানোর কোন বালাই নেই। আমাদের জন্য দরকার ছিলো শিক্ষকের বেতের অসংখ্য বাড়ি। কিন্তু সরকার এখন আইন করে এটা বন্ধ করে দিয়েছে। মানুষ করার শেষ অস্ত্রটাও আজ তারা হারিয়ে ফেলেছেন।

আর অস্ত্রহীন, সহায়হীন, সম্বলহীন মানুষদের শায়েস্তা করতে আমাদের ফুলিশ বাহিনী সদাপ্রস্তুত। সরকার তাদের হাতে তুলে দিয়েছে লাঠি। এখন মনে হচ্ছে মার খাওয়া এই মহান জীবন সাধকদের হাতে আবার বেত তুলে দেবার সময় এসেছে। কারন আমরা শক্তের ভক্ত নরমের যম।

latest video

news via inbox

Nulla turp dis cursus. Integer liberos  euismod pretium faucibua

Leave A Comment