আমি বড় রাজাকার হব এটাই এখন অ্যাম্বিশন

Published On: June 6, 2012By Tags: , Views: 59

প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে একটা লক্ষ থাকে। সেই লক্ষের কথা অত্যন্ত সুন্দরভাবে আমাদের গুরুজনেরা আমাদের মাথায় ছোটবেলা থেকেই ঢুকিয়ে দেন। ছোট বেলায় আমাকে একটি প্রশ্নের উত্তর বারবার দিতে হয়েছে। বাসায় কোন মেহমান আসলেই আমাকে কাছে ডেকে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে অত্যন্ত সুন্দর করে জিজ্ঞেস করতেন “বাবু তুমি বড় হয়ে কি হবে?” প্রথম প্রথম আম্মুর দিকে তাকাতাম। চুপ করে থেকে চিন্তা করতাম। কি চিন্তা করতাম তা আর এখন মনে নেই। বোধহয় এটাই ভাবতাম যে কোন উত্তরটা দিলে ভালো হয়। তখন আমার পক্ষ থেকে আম্মু উত্তর দিয়ে দিত। গম্ভীর একটা হাসি দিয়ে বলতো, “ও বড় হলে ডাক্তার হবে”। এর কিছু দিনের মধ্যেই আমার মাথায় ঢুকে গেল যে বড় হয়ে কি হবে এই প্রশ্নের উত্তর একটাই। আর তা হলো আমি ডাক্তার হবো। যদিও আমার বাব-মায়ের এই ইচ্ছার পিছনে খুব কষ্টের একটা ইতিহাস আছে তবে সেই ইতিহাসটা আমি আর এখানে বলতে চাচ্ছিনা। এখনতো ইতিহাসের দুই ধরনের চর্চার মধ্যে সুযোগ বুঝে ৫ বছরের জন্য কোন একটা ইতিহাস বেছে নেবার যুগ চলছে। তবে সেই রহস্য সবার জানা বলে আর উল্লেখ করলাম না। আমি বরং আমার নতুন অ্যাম্বিশন নিয়ে কথা বলি।

ডাক্তার হয়ে যাবার পর এখন আমার নতুন ইচ্ছা আমি দেশের এক বড় রাজাকার হবো। পাঠক চোখ কপালে তুলবেন না। ভ্রু কুঁচকে থাকলে তা সোজা করুন আর আমার জন্য মনের মধ্যে একটুও ঘৃনার জন্ম হলে তা ঝেড়ে ফেলে দিন। আমি নিশ্চিত এই লেখার শেষ লাইনে আসলেই আপনি আমার মতই একজন বড় রাজাকার হবার স্বপ্ন দেখবেন। হতেও পারে আমাকে ফেবুতে মেসেজ পাঠিয়ে জানতে চাইতেও পারেন কবে থেকে রাজাকারগিরি শুরু করবেন। হয়তোবা জানতে চাইতে পারেন সহজে রাজাকার হবার ফর্মুলাটা কি। কোন সমস্যা নেই পাঠক আমি ফর্মুলা এখানেই বলে দিচ্ছি। তবে ফর্মুলা জানার আগে যা হতে চাচ্ছি তার অর্থটা একটু দেখে নেই।

রাজাকার শব্দটিকে যদি এভাবে বিশ্লেষন করেন যে রাজাকার= রাজার ন্যায় আকার তাহলে বড়ই ভুল হবে। আমার আর আপনার যে গঠন তাতে রাজার ন্যায় আকার প্রাপ্ত হওয়া এখনি সম্ভব না। তবে আপনি যদি শাব্দিক অর্থে বিশ্লেষন করেন তবে আমি আপনি উভয়েই এর অর্থ জেনে পুলকিত হবো। উইকিপিডিয়া আমাদের জানাচ্ছে যে রাজাকার একটি ফার্সি শব্দ। এর অর্থ স্বেচ্ছাসেবক। কি পাঠক, গর্বে বুকটা ভরে উঠছেনা? স্বেচ্ছাসেবার মত একটি মহৎ কাজের সাথে নিজেকে জড়াবো ভেবে আমার নিজেরও অনেক ভালো লাগছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় কি জানেন এই শব্দটি এখন আর শাব্দিক অর্থে ব্যবহৃত হয়না। ১৯৭১ সালের পর থেকে শব্দটি তার শাব্দিক অর্থ বিসর্জন দিয়ে একটি প্রতীকী অর্থ ধারন করেছে। এখন শব্দটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবথেকে বেশী ঘৃণিত শব্দ। জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে গলির ধারের চায়ের দোকান সর্বত্র সবথেকে বেশি আলোচিত শব্দও বোধহয় এটি। আপনিতো জানেনই যে ১৯৭১ সালে যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল, আমাদের নিরপরাধ সাধারন মানুষের উপর নারকীয় অত্যাচার চালিয়েছিল, সাধারন মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল তারাই রাজাকার। এককথায় দেশের আর দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী ব্যক্তিই ৭১ পরবর্তী সময়ে রাজাকার খেতাবে ভূষিত হয়েছিলো। এখন আপনার মনে একটা প্রশ্ন ব্যাপক বড় একটা জিজ্ঞাসা চিহ্ন হয়ে দেখা দিচ্ছে। সেটা হলো তাহলে আমি কেন রাজাকার হতে চাচ্ছি? পাঠক এবার আসল কথাটা তাহলে বলেই ফেলি।

আপনাকে একটু  কষ্ট করে একটা কাজ করতে হবে। আপনি গত ২ দিনের যেকোন জাতীয় দৈনিক নিয়ে বসুন। আমি নিয়ে বসেছি প্রথম আলো। এবার পত্রিকার প্রথম পাতায় চোখ রাখুন। আপনি যে খবরগুলো দেখবেন তার মধ্যে আছে পাহাড় ধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১০, জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন, রমজান মাসের আগেই দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা, বিশ্বব্যাংক বাতিল করেছে পদ্মা চুক্তি ইত্যাদি ইত্যাদি। এবার ভাই চলেন আমরা একটু একটু করে রাজাকার হই।

১৯৭১ সালে রাজাকাররা সাধারন মানুষ হত্যা করে রাজাকার হয়েছে। পাহাড়ে বসবাসকারী এইযে নিরীহ জনগণ তাদের মৃত্যুর জন্য কি প্রশাসন একটুও দায়ী নয়?? পাহাড়ে বসবাসরত ছিন্নমূলদের পূনর্বাসনের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ ছিল তা চলে গেছে প্রশাসকদের পকেটে। পাহাড় কেটে আবাসন প্রকল্প গড়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে চলেছে ভূমিদস্যুরা। আর মাঝখান থেকে মারা গেল হতদরিদ্র ১১০ জনেরও বেশি মানুষ। তাতে কার কিই বা আসলো গেলো? দুনিয়ার কি ক্ষতি বৃদ্ধি হলো? এইযে দেশের সম্পদ নষ্ট করে নিজের পকেট ভারী করা এটাকে কি দেশের সাথে বেঈমানী বলবেন না? তবে এরকম রাজাকারী করে কিন্তু অনেক কিছু হওয়া যায়। তাহলে রাজাকার কেন হবো না বলেন?

আপনাকে যদি আমি প্রশ্ন করি এই পৃথিবীতে নিজের জীবনের পর কোন জিনিসটা আপনার সবথেকে বেশী প্রিয়। আপনার উত্তর এককথায় হবে টাকা। জীবনে সুখ, শান্তি, বিলাস, আরাম, আয়েস এসব কিছুর জন্য যে জিনিসটার সবথেকে বেশি দরকার তার নামই তো টাকা। ব্যাংক ভর্তি টাকা, পারলে বালিশের ভেতর, তোষকের ভেতর টাকা। মজার কথা হলো টাকার পরিমানের সাথে সাথে টাকা অর্জনের আকাঙ্ক্ষার সম্পর্ক সমানুপাতিক। ফলাফল টাকার জন্য অন্ধ মানুষ। এইযে দেখেন ব্যবসায়ীরা রোজার আগেই জিনিস পত্রের দাম বাড়িয়ে দিলো।  উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই। টাকা। তারা কিন্তু মোটেও ভাবছে না দেশের ৯০ ভাগ মানুষ জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এটাকে আপনি কি বলবেন? আমার ভাষায় এরা রাজাকার। কেন জানেন? রাজাকাররা খুন করেছিলো সরাসরি। আর এরা খুন করে চলেছে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত, প্রতিদিন। রাজাকারদের উদ্দেশ্য ছিলো তাদের প্রভুদের খুশি করা আর এদের উদ্দেশ্য নিজেদের পকেট বোঝাই করা। তা পকেট বোঝাই করতে তো আমিও চাই, আপনিও চান। তাহলে রাজাকার না হয়ে উপায় আছে বলেন? চলেন রাজাকার হই।

ছোট্ট বেলায় মামার বাড়ি আম কুড়িয়ে অনেকেই অনেক সুখ খুঁজে পেয়েছেন। পাকা জামের মধুর রসে মুখ রঙিন করেছেন। ভাগ্য ভালো যে আপনি এই জামানায় আম-জাম কুড়াতে যাননি। গেলে কি হতো? এইযে দেখেন আমাদের চোখের সামনে ১১ জন শিশুর লাশ পরে আছে। ওদের অপরাধ কি ছিলো জানেন? কিছুই না। ওরা শুধু পড়ে থাকা লিচু কুড়িয়ে মুখে দিয়েছিলো। বিষাক্ত কিটনাশক এর মরন ছোবলে ওরা হারিয়ে গেছে ওদের মায়ের কোল খালি করে। পাঠক একবার ভাবুনতো এই যে শিশুগুলো মায়ের বুক থেকে হারিয়ে গেলো তাদের মায়েদের কষ্ট আর ৭১ এ রাজাকারদের হাতে নিহত সন্তানের মায়ের কষ্টের মধ্যে বাস্তবিক কোন তফাত আছে কি?? আমার মতে এখনাকার মায়েদের কষ্টটা বরং বেশি কারণ এখন আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আইনের শাসন আমাদের অধিকার। কিন্তু দুঃখের বিষয় কি জানেন যারা লিচুতে বিষাক্ত কীটনাশক মিশিয়ে সামান্য মুনাফার লোভে দেশের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেললো তাদের কিন্তু বিচার হবে না। তারা তাদের মুনাফা ঠিকই বুঝে পাবে। তাদের পকেট ঠিকই ভর্তি হবে। চলেন এমন রাজাকার হই। কি বললেন?? এমন ছোট খাটো রাজাকারীতে আপনার পোষাবে না। হুমম! কথা কিন্তু সত্যি বলেছেন। তাহলে চলেন এবার বেশ বড় রাজাকার হবার চিন্তা করি।

পাঠক এবার আপনাকে সাদা পাঞ্জাবী-পায়জামা পরিহিত, টুপি মাথায় দেয়া এক দরবেশের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। ইনি শেয়ার বাজারের দরবেশ বাবা নামে দেশ জুড়ে আলোচিত। উনি এবং উনার মুরিদরা প্লাস উনার মতই কিছু মানুষ শেয়ার বাজারে কারসাজি করে ৪০ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে রাস্তায় নামালেন। পথের ফকির বানালেন। হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে, লুটপাট করে তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন। সাদা দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে হজ্বে চলে গেলেন। ফিরে এসে তিনিই আবার স্টক একচেঞ্জের পরিচালনা পরিষদের একজন হিসাবে পুরস্কৃত হলেন। ৩০ লাখ লোককে শহীদ করার অপরাধে যদি রাজাকার খেতাব পাওয়া যায় তাহলে এই ৪০ লাখ মানুষকে প্রতিদিন মৃত্যু যন্ত্রনার মত কষ্ট দেবার জন্য কি তাদের রাজাকার বলা হবেনা? যদি হয় তাহলে তাদের শাস্তি হবে না কেন? উত্তর খুব সোজা এরকম রাজাকারদের শাস্তি হয়না।

জনৈক আবুল সাহেবের কথা মনে আছে পাঠক? আপনার যদি ঈদে-পূজায় দেশে যাবার অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে এই আবুল সাহেবকে আপনি বিলকুল চিনে ফেলেছেন। এই আবুল সাহেবের জন্য আজ বিশ্বব্যাংক তাদের সাথে আমাদের পদ্মা সেতু নির্মান চুক্তি বাতিল করেছে। কারণ আবুল সাহেবের দূর্নীতি।  কিন্তু দূর্নীতির দায় ঘাড়ে নিয়েও তিনি মুচকি হেসে বললেন, “আমি একজন ক্লিন ম্যান”।  আমি অবশ্য উনার প্রতিভায় এতই মুগ্ধ যে আমি উনাকে বলি “আবুল দ্য সুপার ম্যান”। কারণ এই ঘটনার পর তাকে অন্য মন্ত্রনালয়ে পূনর্বাসিত করা হয়। বলি এটা কি দেশের পক্ষে যায় না বিপক্ষে যায়? দেশের বিপক্ষে কিছু করলে যদি পুরষ্কৃত করা হয় তাহলে রাজাকার হবার স্বপ্ন তো দেখতেই পারি।

স্বপ্ন, হ্যাঁ বড় রাজাকার হবার স্বপ্ন দেখে চলেছি সবসময়। রাজাকারদের গডফাদার বা গডমাদার হতে পারলে জীবনে আর কিছু না করলেও চলবে। ব্যাংকে কোটি টাকা, ক্ষমতার দাপট, দামী গাড়িতে চড়ে ছুঁটে যাওয়া, ছেলে মেয়েদের দেশের বাইরে পড়তে পাঠানো, দেশ বিদেশে ঘোরাঘুরি আরো কতকি!! দেশকে ভালোবেসে দেশের মানুষের জন্য কিছু করে কে কবে পেয়েছে এই বিলাসের খোঁজ? দেশ জাহান্নামে যাক নিজের স্বার্থ বলে কথা। তাহলে রাজাকার কেন হবোনা বলেন? এখন বুঝতে পারছেন তো রাজাকার হওয়া কেন জরুরী? আজ আপনি যতবড় দূর্নীতিবাজ, যতবড় ঋণখেলাপি, যত বড় স্নত্রাসী বাহিনীর গডফাদার আপনার তত ক্ষমতা, তত বিলাস, তত সম্মান। আজ আমাদের শিক্ষকদের দুমুঠো ভাতের জন্য রাস্তায় লাঠির বাড়ি খেতে হয়। আজ সত্য কথা বলার জন্য সম্মানিত মানুষকে সংসদে অপমান করা হয়। আর তথাকথিত নেতারা দেশ ও দেশের মানুষের সাথে অবিরাম প্রতারনা করার পরও, রাজাকারী করার পরও তারা ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকে যায়। দেখে শুনে আমি বলবো জয় রাজাকারদের জয়, চলেন এমন রাজাকার হই। এমন রাজাকার হয়েও যে সুখ।

সবকিছু বিচার করে ঠিক করেছি এবার রাজাকার আমাকে হতেই হবে। তাই আমি বড় রাজাকার হবো এটাই আমার অ্যাম্বিশন।

latest video

news via inbox

Nulla turp dis cursus. Integer liberos  euismod pretium faucibua

Leave A Comment