আমার বোনটি বড় অমানুষ ছিল
দেশে যখন প্রথমবারের মত একজন নারী স্পিকারের আসনে বসলেন তখন রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ক্ষমতার দিকে একবার তাকিয়ে ভাবলাম ‘বাহ মন্দ কি! এইবার নারী জাগরণের জোয়ারে মেয়েদের সকল দুঃখ-কষ্ট খড়-কুটোর মত ভেসে যাবে’। ভাববোই না কেন? প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী – সমীকরণ কি দাঁড়ালো? দেশের সবথেকে বড় দুই দলের চেয়ারে নারী। তাদের নির্দেশে ছুটে আসেন কোটি জনতা। আরও আছে। স্পিকার নারী, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারী। আগের সরাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন নারী। এছাড়া দেশের নারী নেত্রীরা তো আছেনই। এইতো সেদিন তাদের হেফাজত বিরোধী জ্বালাময়ী বক্তব্যে কেঁপে উঠেছিল প্রেসক্লাবের ভিত। তারা কথায় কথায় প্রেসক্লাবে চলে যান। না হলে নিদেন পক্ষে টক শো আর পত্রিকার পাতা তে জুড়ে বসেন অবশ্যই। কিন্তু গত দুইদিন তাদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের একজন অমানুষ নারীকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এইটা কোন ব্যাপার হতেই পারে না। গ্রামে বাঘ আসলে মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলে – খুব হইচই করে সেই বাঘের ছবি ছাপানো হয়। আমার বোনটি হয়তো মর্যাদার দিক থেকে সেই বাঘের চেয়েও নিম্নস্তরের। তাই তার ব্যাপারে কারো কোন মাথাব্যাথা নেই।
কেউ ভেবে দেখবে না এই মেয়েটি বরিশাল মেডিকেল ইন্টার্ণি করার সময় কত মানুষকে নিরবে সেবা দিয়ে সুস্থ্য করে তুলেছেন। কোন চুতিয়া সুশীল কি পেরেছে এইভাবে বৃহত্তর একটা জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু করতে?? তার মেডিকেল জীবনে তিনি চিকিৎসা সেবা দিয়ে যত মানুষের উপকার করেছেন ঐ সব নারী নেত্রীগুলোকে এক করলেও তার সমান হবে কিনা সন্দেহ হয়। কিন্তু এই বোনটির কথা কিংবা এই পেশায় জড়িত মানুষগুলোর কথা কেও বলবে না। তাদেরকে ধর্ষন করতে না পেরে মেরে ফেললে কিংবা বাসায় পিটিয়ে মেরে ফেললেও কারো মুখ থেকে একটা আহ শব্দ বের হবে না। এই বোনটির ১০ বছর বয়সী একটা ছেলে আছে। তার বাবা সামরিক আইনে শাস্তি পাবেন। এই ছেলেটির ভবিষ্যত নিয়ে কি কোন সুশীল ভাবতে বসেছেন? কেন বসবেন? অমানুষের সন্তান বলে কথা। মিডিয়া এবং বুদ্ধিজীবীদের কাছে এই শ্রেনী অস্পৃশ্য। এদের কথা বলতে বারণ। এদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো পাপ। আর এদের অধিকারের জন্য মুখ খোলা কিংবা কলমের এক দুই খোঁচা দেয়া তো সুশীল আইন অনুসারে দন্ডনীয় অপরাধ।
নাহ বাবা যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। একটা অমানুষতো কমেছে। স্বাচিপ কিংবা ড্যাবের নেতাদের ক্ষমতা নিয়ে চিন্তা ভাবনার খেলা থেকে একটা নাম তো কাটা পড়েছে। অন্তত ভোট চাইবার সময় একজন অমানুষের কাছে তো কম যেতে হবে। অন্তত ভোটের অনুরোধ দিয়ে একজন রক্তচোষাকে একটা চিঠি কম পাঠাতে হবে। সেটাই বা কম কি। ক্ষমতার আসনে বসে থাকা সম্মানিত স্যার মহোদয়গণ আপনারা আমার ইভা কিংবা শেজাদি বোনের জন্য কি একবারো বিচারের দাবী তুলেছিলেন জোরে সোরে?? না তুলেননি। কারণ তারা এখন Gone Case। তাদের এখন ভোট দেবার ক্ষমতা নাই।
এই অমানুষদের জন্য কেউ কথা বলবে না। নারী হলেও না পুরুষ হলে তো আরও না। মিডিয়া বলবে না, চুশীল গোষ্ঠী সেইসময় অন্ধ হয়ে যাবে। জনাব মিজান সাহেবকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নামে আছেন যিনি উনার ট্রমা সেন্টার নিয়ে ব্যস্ত। আরও আছেন এই অমানুষদের কিছু সেলিব্রেটি নেতা। যাদের অনেকেই ৫ বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকার লিজ পান। নিয়োগ বাণিজ্য আর বদলী বাণিজ্য সামাল দিতেই হিমশিম খান। নতুন মেডিকেল কলেজ কোন কোন গলির মোড়ে এখনো বসানো বাকি আছে তা খুঁজে খুঁজে বের করেন। প্রতিবছর অমানুষ তৈরীর কারখানার সংখ্যা বাড়ান। সেখান থেকে অমানুষ তৈরী হয়। ৫ বছর পর সেই অমানুষদের কাজে লাগে। তাদের ডাক পড়ে মিছিলে, মানব বন্ধনে আর ভোটের বুথে। মাঝে মাঝে কাঙ্গালীভোজ খাওয়ানোর জন্য তাদের নিয়ে যাওয়া হয় কোন বড় হোটেলের সেমিনারে। হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় একটা চামড়ার ব্যাগ আর সস্তা কলম। তাই নিয়ে সেই অমানুষদের কি কাড়াকাড়ি! তারা দূর থেকে দেখেন আর মিটিমিটি হাসেন। তাদের সেই হাসির দমকে হারিয়ে যায় ইভা, শেজাদিদের কষ্টের চিৎকার। নারী নেত্রীদের শ্লোগানের আওয়াজে কেউ শুনতে পায় না এই অমানুষগুলোর বাঁচার জন্য করা শেষ আর্তনাদ। শুধু আমাদের মত সাধারণ অমানুষদের কানে তা বড্ড বাজে। বড় করুণ সে সুর।
আল্লাহ আমার অমানুষ বোনগুলোকে জান্নাত দান করুন। আমিন।
editor's pick
latest video
news via inbox
Nulla turp dis cursus. Integer liberos euismod pretium faucibua