সর্বদলীয় দেশ ভাগ-বাটোয়ারা বিল, ২০১৩
১৩ই ডিসেম্বর, ২০১৩। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর দেশের ১৭ কোটি নাগরিকের পক্ষথেকে একটি আবেদন করা হলো। আরজিতে উল্লেখ করা হলো যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে এবং বিপক্ষে দেশের দুই বৃহৎ রাজনৈতিক জোট যেভাবে অবস্থান গ্রহণ করেছে তাতে এই সংকটময় মূহুর্তে আরো একটি বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে, জান-মালের ক্ষতি, মানুষের অকাল মৃত্যু রোধে দেশের আপামর জনসাধারণ একটি প্রস্তাব রাখছে। প্রস্তাব অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তার নিজ ক্ষমতাবলে আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয়দিবসের দিন একটি বিশেষ সংসদ অধিবেশন আহ্বান করবেন। সেই অধিবেশনে “সর্বদলীয় দেশ ভাগ-বাটোয়ারা বিল, ২০১৩” উত্থাপিত হবে। সকল জাতীয় প্রতিনিধি মানে সংসদ সদস্যের উপিস্থিতিতে আইনটি কন্ঠ ভোটের মাধ্যমে পাস হলে সকল রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান হবে বলে দেশের ১৭ কোটি জনগণ মনে করে।
রাষ্ট্রপতি আবেদনটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে একান্তে আলোচনা করলেন। প্রধানমন্ত্রী তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ও মন্ত্রীদের সাথে আলোচনা করে ইতিবাচক সাড়া দিলেন। এখন বাকি থাকলো বিরোধীদল কে রাজি করানো। কিন্তু দেশের ইতিহাসে এই প্রথম বিরোধীদল নিজে থেকে এগিয়ে এলো। মিডিয়ার মাধ্যমে ঘটনা জেনে বিরোধীদলীয় নেত্রীর খুব কাছের একজন উপদেষ্টা এ ব্যাপারে সরকারী আমন্ত্রণের পূর্বেই একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর মাধ্যমে তাদের উৎসাহের কথা জানালেন। ব্যাটে-বলে মিলে গেল। ছক্কা!। এই প্রথমবারের মত প্রবল দুই প্রতিপক্ষ তাদের সকল মতবিরোধ ভুলে একসুরে গান গেয়ে উঠলো।
আজ সেই ১৬ই ডিসেম্বর। সংসদভবন থেকে এই অভূতপূর্ব, অভাবনীয়, অচিন্ত্যনীয়, ঐতিহাসিক অধিবেশন মিডিয়ার মাধ্যমে দেখার সুযোগ পেয়ে দেশের জনগণ পুলকিত, উদ্বেলিত। থানা পর্যায়ে দুই দলের নেতা, পাতি নেতারা একসাথে বসে অধিবেশন দেখছেন। ছাত্রদল আর ছাত্রলীগের নেতা-নেত্রীরা টিএসসিতে বড় পর্দায় অধিবেশন দেখার ব্যবস্থা করেছে। তবে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের মন কিঞ্চিৎ খারাপ। কারণ ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের নেত্রী তার পাশে না বসে ছাত্রদলের সহ সভাপতির পাশে বসেছে। মাঝে মাঝে আবার হেসে হেসে তার গায়ে হেলে হেলে পড়ছে। শিবিরের নেতা ছাত্রমৈত্রীর এক নেতার সাথে কি নিয়ে যেন তর্ক করছে। হয়তো জিহাদী জোশ নিয়ে কিছু একটা।
দেশের মানুষ খুব আগ্রহ নিয়ে ৪টা বাজার জন্য অপেক্ষা করছে। আজ অধিবেশন চলবে ৪টা থেকে ১২টা পর্যন্ত। ১২টা না বাজার আগ পর্যন্ত এই অধিবেশন চলতেই থাকবে। এইতো ৪টা বেজে গেছে। এইতো স্পিকারকে দেখা যাচ্ছে। এখনি শুরু হবে সেই ঐতিহাসিক অধিবেশন। জনগণ বুকে পাথর বেঁধে অপেক্ষা করছে।
স্পিকারঃ মাননীয় সংসদসদস্যবৃন্দ, জাতীয় সংসদের ইতিহাসে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এই অধিবেশনে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। আজকের এই অধিবেশনে এই মহান সংসদে আমরা প্রথমবারের মত দেশের জনগণ কতৃক আনীত একটি বিলের উপর আলোচনা করবো এবং শেষে ভোটাভুটির মাধ্যমে দেশের জনগণ কতৃক আনীত এই বিলটির গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারন করা হবে। আজ এই ঐতিহাসিক দিনে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি দেশের জন্য জীবনদানকারী সকল শহীদদের, যাদের আত্নত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীন দেশের নাগরিক হবার গৌরব লাভ করেছি। আমি আজ সরকারী ও বিরোধী উভয় দলকেই ধন্যবাদ দিতে চাই। কারণ দেশের সংসদের ইতিহাসে এই প্রথম সকল দলের সকল সংসদ সদস্য আজ উপস্থিত হয়েছেন। আজ আমাদের মাঝে নেই কোন ভেদাভেদ। আজ আমরা একজোগে দেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণের কাজ করবো।
এবার আমি সরকারীদলের সাংসদ জনাব আবুল মিয়াকে, “সর্বদলীয় দেশ ভাগ-বাটোয়ারা বিল, ২০১৩”, এই মহান সংসদে উপস্থাপনের জন্য অনুরোধ করছি।
তুমুল টেবিল চাপড়ানির মাধ্যমে জনাব আবুল মিয়া হাসি হাসি মুখে উঠে দাড়ালেন।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মাননীয় স্পিকার। এই মহান সংসদে দাঁড়িয়ে এমন একটা ঐতিহাসিক বিল উপস্থাপন করতে পারবো তা আমি তো আমি, আমার বাপ দাদার ১৮ গুষ্টি ভাবে নাই। যাই হোক। শুভ কাজে দেরী করা উচিত হবেনা। আমরা আজ আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ রক্ষায় যে বিলটি পাশ করতে যাচ্ছি তা হল সর্বদলীয় দেশ ভাগ বিল-২০১৩। এই বিলের মাধ্যমে আমরা জাতির জনক, সর্বকালের সর্ব যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, আমাদের আপনাদের, আপামর জনসাধারণের নয়নের মণি, যুগশ্রষ্ঠা, কালের প্রবর্তক, অ্যা, হ্যাঁ
স্পীকার তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, জনাব আবুল সাহেব বিল উত্থাপন করুন।
আবুলঃ জ্বী মাননীয় স্পীকার। যা বলছিলাম, এই মহান সংসদে এই ঐতিহাসিক বিল পেশ করার সুযোগ দানের জন্য আপনাকে জাতির পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ। জাতির কথা যখন এলোই মাননীয় স্পীকার, স্মরণ না করে পারছিনা সেই মহান ব্যক্তির কথা যিনি স্বপ্ন না দেখলে
বিরোধী দলীয় চিফ হুইপঃ আবুল ভাই, আজকে আর এগুলা বইলেন না। আমরাও জানি জাতিও জানে কার কথা বলতেছেন আর তার অবদান কি। তার থেকে যে কাজ করতে আসছি তাই করে ফেলি। শুভকাজে দেরী করে লাভ নাই রে ভাই। দেরী করলেই যে লেট হইয়া যায় তা তো মিয়া আপনি জানেনই। বিশ্বব্যাংকের কথা মনে আছেনা?? তার চেয়ে লন তাড়াতাড়ি বাড়িত যাইগা। এই দিনের জন্যই তো এত দিন এত লাত্থি-গুতা খাইছি মিয়া।
আবুলঃ ভাই, কথা মন্দ বলেন নাই। তাহলে শুরু করি। মাননীয় স্পীকার, এই আইন পাশের সন্ধিক্ষণে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই আমার দলের এবং বিরোধীদলের সকল সাংসদবৃন্দকে যারা সকল কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলেও আজকে এই বিশেষ দিনে উপস্থিত থেকেছেন। আমি আরও……
হঠাৎ সংসদ ভবনের এক কোণা থেকে একটা মিউ মিউ শব্দ শোনা গেল। কালো কোট পড়া কালো বেড়াল আখ্যা পাওয়া একজন মিস্টার চুরঞ্জিত বলে উঠলেন, ‘ঐ মিঃ সেতু থাম না রে ভাই। বিলের কথা বল। আমারে তো একটু হলে রাস্তায় পিটা খাওয়ার ব্যবস্থা করেই দিয়েছিলি। ভাই, এইবার তাড়াতাড়ি শেষ কর। দেখ ঘড়িতে সাড়ে ৫টা বাজে’।
আবুলঃ হ্যাঁ এ্যা। হ্যাঁ। যা বলছিলাম। আমি একটু না বলে পারছিনা………
এরমধ্যে হঠাৎ শোরগোল। জামাতী একজন সাংসদ পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে মাইক ছাড়াই চিৎকার করে বলা শুরু করলেন, ‘ঐ মিয়া? পাইছেন কি? আমাগো সময়ের দাম নাই বুঝি? জানেন না মিয়া সময় নষ্ট মানে সময়ের অপচয়। আর অপচয়কারী আমাদের থুক্কু শয়তানের ভাই। আপনার কিছু বলতে হবে না। যা বলার আমিই বলতেছি’।
‘ভাইসব, আপনারা জানেন ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামে বলা আছে সকল মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। আমরা যা কিছু পাই তা ভাগ করে নেবার কথা ধর্মেই বলা আছে। এই দেশ আমাদের। একসময় অনেক বড় ভারতবর্ষ আমরা ভাগ করে নিয়েছিলাম। তারপর পাকিস্তান ভাগ করে নিয়েছি। তাতেও আমাদের শান্তি হয়নি। এবার আমরা রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশ নামের এই দেশটাকেও ভাগ করে নিতে যাচ্ছি। ভাগ কিভাবে হবে সেইটা নিয়েই বিল। আমি অতশত বুঝিনা। সকল মুসলমান ভাগ করে নেবে সমান সমান। এই হইলো ফাইনাল’।
স্পীকারঃ মাননীয় সাংসদ, আগে বিল আসুক। ভাগ পরে হবে। জনাব আবুল সাহেব আপনি বিল উত্থাপন করুন।
আবুলঃ জ্বী মাননীয় স্পীকার। আমি আর একটি মুহুর্ত নষ্ট না করে ‘সর্বদলীয় দেশ ভাগ বিল-২০১৩’ এই মহান সংসদে উত্থাপন করলাম।
স্পীকারঃ মাননীয় সংসদ সদস্যগণ আপনাদের নিকট ইতিমধ্যেই বিলটি পৌঁছে গেছে। এখন থেকে ৩০ মিনিট পরে সংসদে এই বিলের উপর আলোচনা হবে। ৩০ মিনিটের জন্য সংসদ মূলতবী করা হল।
৩০ মিনিট পর।
স্পীকারঃ মাননীয় সংসদ সদস্যগণ জাতীয় সংসদের ইতিহাসের সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ এই অধিবেশন আবার শুরু হচ্ছে। এখন সংসদে আনীত বিলের উপরে আলোচনা করা হবে। আপনারা সরকারী দল থেকে ৩ জন আর বিরোধীদল থেকে ২ জনের নাম আমার কাছে প্রস্তাব করেন।
বিরোধী দলীয় চিফ হুইপঃ মাননীয় স্পিকার, আপনি এটা কি বললেন? এটা কেমন বিচার করলেন? ওদের ৩ আর আমাদের ২ কেন? এটা একটা ফ্যাসিবাদী আচরণ। আমরা এই আচরণ মানতে পারছি না। সংখ্যা সমান করা হোক। না হলে আমরা ওয়াক আউট করতে বাধ্য হব।
হঠাৎ পল্টিবাজ মদুদ চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘আরে ভাই বলেন কি?? আমরা কেন ওয়াক আউট করবো? আজকে যেকোন অবস্থাতেই ওয়াক ইন থাকতে হবে। মাননীয় স্পীকার, আমরা বিরোধীদল এতদিন পরে সংসদে ওয়াক আউট করার জন্য আসিনি। আমরা থাকতেই এসেছি। বোঝেনই তো হে হে। থাকতে আমাদের হবেই’।
বিরোধী দলীয় চিফ হুইপঃ জ্বী তা তো বটেই। আমার বক্তব্য আর আজকে কষ্ট করে আপনাকে এক্সপাঞ্জ করতে হবেনা মাননীয় স্পীকার। আমি নিজেই আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করলাম। আপনার কথা আমরা মেনে নিচ্ছি মাননীয় স্পীকার। ৩ আর ২ ই সই।
স্পিকারঃ ধন্যবাদ জনাব চিফ হুইপ সাহেব। এবার বিল নিয়ে খোলামেলা কথা বলবেন জনাব তোফা সাহেব।
তোফাঃ মাননীয় স্পীকার। আমি অতি অল্প কথার মানুষ। বেশি কথা কখনোই ভালো লাগে নাই। আমি খুব সংক্ষেপে এই মহাগুরুত্বপূর্ণ বিলের সার-সংক্ষেপ উল্লেখ করছি।
এই বিল অনুযায়ী বর্তমান ক্ষমতাশীন মহাজোট সরকার এবং বিরোধীদলে থাকা পূর্বের ৪ দলীয় জোট তথা বর্তমানে ১৮ দলীয় জোট এই সোনার বাংলাদেশকে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেবে। দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে, জনগনের জান ও মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এর থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ আর হয় না। এই দেশকে ভাগ করে নেবার বিলে সকল রাজনৈতিক জোটের সম্মতি আছে। তবে সমস্যা হল কোন জোট দেশের কত অংশ পাবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। সেই জন্যই আজকের এই অধিবেশন। বর্তমান প্রস্তাব অনুযায়ী মহাজোট যেহেতু বিপুল ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ কাজেই মহাজোট পাবে বাংলাদেশের ৮০ ভাগ। আর ১৮ দলীয় জোট পাবে ২০ ভাগ।
এই কথা শেষ হতে না হতেই তুমুল হট্টগোল শুরু হয়ে গেল বিরোধী শিবিরে। তারা কোনভাবেই এই প্রস্তাব মানবেন না।
অর্ডার, অর্ডার বলেও স্পীকার গোলমাল থামাতে না পেরে শেষমেষ দুই নেত্রীর শরণাপন্ন হলেন। অবশেষে সিদ্ধান্ত হল যে দুই পক্ষ থেকে দুই নেত্রী শুধু কথা বলবেন।
প্রধানমন্ত্রীঃ বিরোধী দলীয় নেত্রী আপনি কেন বুঝতে পারছেন না আমরা দুই তৃতীয়াংশ আসন দখল করে আছি। আপনাদের উচিত আমাদেরকে ৮০ ভাগ দিয়ে দেওয়া।
বিরোধী দলীয় নেত্রীঃ এই আসনগুলো কার দয়ায় পেয়েছিলেন তা আমরা জানি। জাতি জানে। ইতিহাস সাক্ষী।
প্রধানমন্ত্রীঃ ইতিহাসের কথা বলবেন না ম্যাডাম। ইতিহাসের কথা আসলে ৭ই মার্চ আসবে। যে ভাষন না হলে দেশ স্বাধীন হত না।
বিরোধী দলীয় নেত্রীঃ ইশশ! কি এমন ভাষণ? ২৭ শে মার্চের ঘোষণা না হলে দেশ বুঝি খুব স্বাধীন হত?
প্রধানমন্ত্রীঃ সেই ভাষণ আমার বাবার পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল।
বিরোধী দলীয় নেত্রীঃ সেই ভাষণ আমার স্বামী দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীঃ আমার বাবা ছিলেন এই দেশের স্বপ্নের রূপকার।
বিরোধী দলীয় নেত্রীঃ আমার স্বামী এই দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। উনি ছিলেন সেক্টর কমান্ডার।
প্রধানমন্ত্রীঃ উনি রাজাকার পুনর্বাসন করেছেন।
বিরোধী দলীয় নেত্রীঃ আপনার বাবা ৭৪ সালে পাকিস্তানে গিয়ে টিক্কা খানের সাথে হাত মিলিয়েছেন, ভুট্টোকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন, আর রাজাকারদের ক্ষমা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীঃ মিথ্যা কথা। বাবা ক্ষমা করেননি।
বিরোধী দলীয় নেত্রীঃ করেছেন। আমি সাক্ষী।
প্রধানমন্ত্রীঃ আপনি বললে তো হবে না। ইতিহাস জানে। যাইহোক, ৭০-৩০। রাজি হয়ে যান।
বিরোধী দলীয় নেত্রীঃ না। কখনোই না। ৫০-৫০।
প্রধানমন্ত্রীঃ আপনি কোন মুখে দাবী করেন? এখনো তো আপনি রাজাকারদের পক্ষেই আছেন। তাদের সাথে জোট করেছেন।
বিরোধী দলীয় নেত্রীঃ আপনি আমার জোটের কথা বলেন? ৯৬ এ আপনি কাদের পাশে বসে জোট করেছিলেন? ভুলে গেছি মনে করেছেন? আর তাছাড়া আপনি তো এখন আছেন স্বৈরাচারের সাথে।
প্রধানমন্ত্রীঃ আপনি বড় বড় কথা বলেন না। ২১ শে আগস্ট সারাদেশে গ্রেনেড হামলা করেছিলেন। আপনি খুনি।
বিরোধী দলীয় নেত্রীঃ আপনি মুখ সামলে কথা বলেন। আপনিই তো নির্দেশ দিয়ে রাজপথে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ খুন করেছেন। আপনি খুনি।
প্রধানমন্ত্রীঃ চুপ। আমি কতগুলা ডক্টরেট আপনি জানেন?
বিরোধী দলীয় নেত্রীঃ চুপ। আমি ৩ বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী আপনি জানেন না বুঝি?
প্রধানমন্ত্রীঃ যাইহোক, সময় বেশী নাই। আসেন ঝামেলা শেষ করি। ৬৫-৩৫। কি বলেন?
বিরোধী দলীয় নেত্রীঃ নাহ। অনেক দূর। ৫৫-৪৫।
প্রধানমন্ত্রীঃ অনেক বেশী হয়ে গেল। ঠিক হচ্ছে না কিন্তু আপা। আমি কিন্তু জেলে থাকার সময় আপনাকে খিচুড়ি খাইয়েছিলাম।
বিরোধী দলীয় নেত্রীঃ নাহ আপা বেশী হয়নি। আর তাছাড়া আমিও বাসা থেকে শুটকি ভর্তা এনে খাইয়েছিলাম আপনাকে।
প্রধানমন্ত্রীঃ যাই বলেন আপা। আপনি কোন দাম ছাড়াই গুলশানের বাড়ি পেয়েছেন।
বিরোধী দলীয় নেত্রীঃ আপনি কিন্তু ১ টাকায় টঙ্গভবন পেয়েছেন। পরিবারের সবার নিরাপত্তা পেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীঃ আমার আর এসবের দরকার কি বলেন? বিজয় তো আমেরিকাতে।
বিরোধী দলীয় নেত্রীঃ আমারও তো দরকার নাই আপা। বারেক তো লন্ডনে।
প্রধানমন্ত্রীঃ আপা সময় নাই। আসেন শেষ করি। হাজার হোক দেশতো ভাগ করেই খাচ্ছি আমরা।
বিরোধী দলীয় নেত্রীঃ ঠিকাছে আমি ফাইনাল দাম বলছি। আমাদের ৪০ আপনাদের ৬০। মেনে নেন আপা।
প্রধানমন্ত্রীঃ হুম। ঠিকাছে। মেনে নিলাম। আসেন একটু বুকে বুক মিলাই।
বিরোধী দলীয় নেত্রীঃ আসেন আপা। কতদিন অপেক্ষা করেছিলাম কবে দেশটাকে আমরা এভাবে নিজেদের মত করে লুটেপুটে খাবো। আসেন।
এমন সময় সংসদে দেখা গেল এক বিরল দৃশ্য। ভেদাভেদ ভুলে সরকারী দল আর বিরোধীদলের সদস্যরা একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরছে। অনেকের চোখে পানি। তাদের রাজনৈতিক জীবনের লক্ষ্য আজ পূরণ হয়েছে। টিএসসি-র অবস্থাও তাই। ছাত্রদলের সহসভাপতি স্থান কাল ভুলে ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের নেত্রীকে জড়িয়ে ধরেছে। শিবিরের নেতা ছাত্রমৈত্রীর নেতাকে জড়িয়ে ধরতে চাচ্ছে। কিন্তু ছাত্রমৈত্রীর নেতার চোখে সন্দেহ দেখে সরে গেছে। এমন দৃশ্য কেউ কখনো কল্পনা করেনি।
হঠাৎ একসাথে অনেকগুলো পায়ের আওয়াজ শোনা যেতে থাকলো। প্রথমে ধীর লয়ে শুরু হলেও আস্তে আস্তে শব্দ বাড়ছে। সবার কাছে মনে হচ্ছে অসংখ্য মানুষ মিছিল করে এগিয়ে আসছে। প্রথমে মনে হল শ’খানেক মানুষের মিছিল। কিন্তু একটু পরে শব্দ আরও বাড়লো। এখন মনে হচ্ছে হাজার খানেক মানুষের মিছিল। মিছিল দেখা যাচ্ছে না তবে শব্দ শোনা যাচ্ছে। টিএসসি, শাহবাগ তো বটেই খোদ সংসদ ভবনের ভিতরে যারা ছিলো তারাও শুনতে পাচ্ছে সেই মিছিলের পায়ের আওয়াজ। শব্দের তীব্রতা বাড়ছে। এখন মনে হচ্ছে লক্ষ লোকের মিছিল হেঁটে যাচ্ছে সংসদের দিকে। সবার চোখে মুখে ভয়। অনেকে আতংকিত। শিবিরের সেই নেতা এখন চাদর দিয়ে মাথা ঢেকে ফেলেছে।
হঠাৎ মিছিল থেকে জয় বাংলা বলে শ্লোগান আসলো। প্রথমে একটা। এরপর দশটা। হঠাৎ লক্ষ কণ্ঠের গগনবিদারী শ্লোগান উঠলো , জয় বাংলা। দেশের মানুষ হতবাক। হচ্ছেটা কি? কাউকে দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তাদের কন্ঠে জয় বাংলা শ্লোগান শোনা যাচ্ছে। ব্যাপার কি? এরা কারা? আর মিছিল যাচ্ছেই বা কোথায়? খেয়াল করতেই বোঝা গেল মিছিলের গন্তব্য হল সংসদ ভবন।
এদিকে সংসদ ভবনে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। গেটে পাহারা ১০ গুণ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কেউ বুঝতে পারছে না এই লক্ষ লোকের মিছিল করছে কারা? তাদেরকে দেখা যাচ্ছে না কেন? একটু পর সবার চোখেই ধরা পড়লো আসল ব্যাপারটা। প্রথমে দেখা গেল একটা মুখ। শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে সংসদের দিকে। একটা ছোট্ট বাচ্চা বলে উঠলো আরে এত আমার বাংলা বইয়ে দেখা বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মাদ এর মুখ। ম্লান হেসে মুখটি জানালো, ‘তাকিয়ে দেখো আরো অনেককেই দেখতে পাবে’। এখন সবাই এক এক করে দেখতে পেল পুরো মিছিলটাকে। লক্ষ লক্ষ শহীদদের পদভারে কম্পিত হচ্ছে পুরো দেশ। ঐ তো খাকি মিলিটারি পোশাক পরা বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মুন্সি আব্দুর রব কে দেখা যাচ্ছে। ঐখানে উন্নত শিরে দাঁড়িয়ে আছেন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল। ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের পিছনে দাঁড়িয়ে ৩০ লক্ষ শহীদের অবয়ব। তাদের কন্ঠে আকাশভেদী হুংকার- জয় বাংলা।
একটু পরেই সবচুপ। কোন শ্লোগান নেই। ভীড়ের মধ্য থেকে একটা তর্জনি দেখা গেল। আবছা অবয়বে সাদা পাঞ্জাবী পরা একটা মানুষের তর্জনি। পুরো সংসদ ভবন এলাকায় পিন পতন নিরবতা। তর্জনি নির্দেশ করছে সংসদ ভবনের দিকে। নির্দেশ করার সাথে সাথে বজ্রকন্ঠে ঘোষণা এল ‘এবারের সংগ্রাম দেশ থেকে অসৎ রাজনীতি দূর করার সংগ্রাম’, এবারের সংগ্রাম মানুষের মুক্তির সংগ্রাম’। সেই সাথে আবার লক্ষ কণ্ঠের বুকে কাঁপন ধরানো সেই শ্লোগান, জয় বাংলা।
হঠাৎ মাথায় টুপি পড়া, লুঙ্গি পড়া একজন সৌম্য চেহারার মানুষ এলেন। এসেই প্রচন্ড আবেগ নিয়ে চিৎকার করে বললেন, ‘খামোশ’। সাথে সাথেই আবার সেই পিনপতন নিরবতা। সেই লম্বা সাদা দাড়ির সৌম্য চেহারার মানুষটি বললেন, ‘আমরা এই দেশের ভিত্তিভূমি রচনা করেছিলাম। আমরা বুকের রক্ত ঝড়িয়ে এই দেশকে শোষণ মুক্ত করতে চেয়েছিলাম কি এইজন্য যে আজ দেশটাকে সবাই মিলে ভাগ করে লুটেপুটে খাবে?? লক্ষ কন্ঠে আওয়াজ এলো, না, না, না।
এবার একটা মিলিটারি পোষাকের অবয়ব দেখা গেল। সে স্পষ্ট অথচ দৃঢ় স্বরে বললো, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আসো আমরা এই সংসদ নামের খেলাঘর ভেঙে গুড়িয়ে দেই। দেশকে বাঁচাতে আবার আমরা অস্ত্র হাতে তুলে নেই। সমবেত শহীদেরা আবার শ্লোগান তুললো, জয় বাংলা।
সবাই ভীত চোখে দেখছে শহীদদের মিছিল এগিয়ে যাচ্ছে সংসদের দিকে। তারা ঢুকে পড়ছে ভিতরে। হাতে তাদের হাতিয়ার। পুলিশ তাদের বাঁধা দিতে পারছে না। যে যেভাবে পারছে পালিয়ে যাচ্ছে। সংসদে এখনো অবস্থান করছে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। খুব খারাপ অবস্থা তাদের সবার। এইতো মিছিল ঢুকে পরছে সংসদের ভিতরে। একটু পরে তারা সংসদ ভবন ভাঙা শুরু করলো। একটা একটা করে ইট খুলে যাচ্ছে। কেউ কেউ উঠে যাচ্ছে সংসদের ছাঁদে। সাংসদরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছেন। পালিয়ে যাবার রাস্তা খুজছেন সবাই। বেচারা আবুল সাহেব পরেছেন মহা ফাঁপরে। তার হাতে বিলের সব কাগজপত্র। সে কিছুতেই এগুলো হাতছাড়া করতে পারছে না। ওদিকে পালাতেও পারছে না সে। হঠাৎ একটা ইট এসে পরেছে আবুলের মাথায়। অসহ্য যন্ত্রনায় আবুল মাথা ধরে বসে পরেছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে সারা মুখ। আবুল কোন রকমে তাকিয়ে দেখে পাশ দিয়ে সারা খাতুন যাচ্ছে। সে শরীরের সবটুকু জোড় একসাথে করে চিৎকার করে সারা সারা বলে ডাকছে।
এই আবুল ভাই? আবুল ভাই? ওই মিয়া? হইছে কি?
আবুল চোখ মেলে দেখে কোথাও কিছু নাই। সব ঠিক আছে। সে মুখে হাত দিয়ে দেখলো। নাহ কোন রক্ত নাই। শুধু সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। মাথা তুলে দেখে যে শেখ সেলিম তাকে ঠেলা দিচ্ছে।
শেখ বেলিমঃ কি ভাই? এই ভরা মজলিসে এইভাবে সারা আপার নাম ধরে চিৎকার করতেছেন কেন? আর এত ঘামতেছেন কেন? সারা আপাকে স্বপ্ন দেখছেন নাকি?
আবুলঃ হ্যাঁ, না মানে। উফ কি যে বাজে স্বপ্ন। আচ্ছা বিল কি উত্থাপিত হয়েছে?
শেখ বেলিমঃ কিভাবে হবে? আপনি না উত্থাপন করলে তো আজ আর হবে না।
আবুলঃ না মানে ইয়ে বলছিলাম কি, আজ বিল না তুলি। আরো একটু ভাবি কেমন। আসলে ভাই শরীর ভালো লাগছে না।
এই কথা বলেই কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে জনাব আবুল সাহেব কুব দ্রুত সংসদ ত্যাগ করলেন।
স্পীকার এসে ঘোষণা করলেন, অনিবার্য কারণ বশত সর্বদলীয় দেশ ভাগ আইন-২০১৩ বিল আকারে আজ সংসদে উত্থাপিত হল না।
editor's pick
latest video
news via inbox
Nulla turp dis cursus. Integer liberos euismod pretium faucibua