সর্বপ্রথম ও আমরা
বাংলাদেশের সবাই প্রথম হতে চায়। কেউ ২য় হবে না। সবাইকেই সবার আগে থাকতে হবে। আমি সবার আগে করেছি, আমি সবার আগে দেখেছি, আমি সবার আগে প্রচার করেছি, আমি সবার আগে ভেবেছি – এই করতে করতেই তো জেনারেশনের পর জেনারেশন চলে যাচ্ছে। কাজের কাজ হচ্ছে কতটুকু???
প্লাজমা থেরাপির সাথে যুক্ত হয়ে যে নাটক দেখছি – নিজের উপরেই তীব্র ঘৃণা হচ্ছে। সবাই ব্যস্ত নিজেকে প্লাজমা থেরাপির জনক হিসাবে প্রচার করতে। ফেসবুকে ডাক্তারদের অসংখ্য গ্রুপ। সেদিন একটা গ্রুপের একজনকে লিখতে দেখলাম – “আমরা কাজ করছি দেশের সর্বপ্রথম প্লাজমা থেরাপি নিয়ে কাজ করা দলের সাথে।” কথাটার মাজেজা এমন যে সর্বপ্রথম দলের সাথে কাজ না করলে মনে হয় তার কথা কেউ শুনবে না।
কোথায় নেমেছি আমরা? কোথায় যাচ্ছি আমরা। আজ একটা গ্রুপে একজন চিকিৎসক কিংবা হবু চিকিৎসককে লিখতে দেখলাম – “আমি আপনাদের পায়ে ধরি, আমার বাবাকে বি পজিটিভ প্লাজমা দিয়ে বাঁচান।”
এই মূহুর্তে আমি জানি বি পজিটিভ প্লাজমা কোথায় আছে। কিন্তু এও জানি দেয়া যাবে না। নিজেকে ঠিক ততটাই অসহায় লাগছে যতটা লেগেছিল নিজের বাবাকে হারানোর সময়। একটুখানি অক্সিজেনের অভাবে আমার জন্মদাতার এয়ার হাংগার আমি নিজে দেখেছি। চিৎকার করে বলেছি – আমার বাবার জন্য একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার দেন কেউ।
মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি। বুকের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ। আমি কিছু করতে পারছি না। আমরা কিছু করতে পারছি না। নিয়ম-কানুন, প্রটোকল, আইন-আদালত হাবিজাবির জঞ্জালে ভরা এই মিথ্যে কথার দেশে নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট লাগে।
সবাই ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। কে কার আগে সর্বপ্রথম হবে সেই ভাবনায় প্রায় পাগল। অনেককিছু দেখছি। সহ্য করছি। বলতে পারছি না। মুখ খুললেই সমস্যা। খুব গভীর থেকে দেখছি একটা মহামারিকে পুঁজি করে ব্যবসা কীভাবে হচ্ছে। মাথা থেকে পা পর্যন্ত আমরা সবাই ব্যবসায়ী। মানুষের মৃত্যু নিয়ে এত বড় ব্যবসা এর আগে এই দেশে হয়নি।
আপনারা প্রথম হন। আপনারা জয়ী হন। আপনারা ক্রেডিট নিয়ে খুশী হন। সবই আপনারা হন। দেশটা নিজেদের করে নেন। তারপরও একটু তৃপ্ত হন। আপনারা তৃপ্ত হয়ে শান্ত হলে আমরা বেঁচে যাই। অনাগত ভবিষ্যত বাঁচে। বাংলাদেশটা একটু নিঃশ্বাস নিতে পারে।
editor's pick
latest video
news via inbox
Nulla turp dis cursus. Integer liberos euismod pretium faucibua