ম্যাজিকাল বার্সা
পৃথিবীর মানুষের স্মরণশক্তি দিন দিন কমে যাচ্ছে নাকি জানি না, তবে ধৈর্য্য যে কমে যাচ্ছে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। গত ১টি মাসের কথায় ধরুন না, অন্যগ্রহের ফুটবল খেলে যাচ্ছে যে দল গত ৪টি বছর ধরে তাদের গত ১ মাসের পারফরমেন্স দেখেই সবাই বলাবলি শুরু করলো ‘নাহ, শেষ। বার্সা যুগ শেষ’। এটাকে স্মরণশক্তির দূর্বলতা বলুন আর ধৈর্য্যের অভাবই বলুন একটা কিছুর অভাব যে আমাদের হচ্ছে সেটা আপনাকে মানতেই হবে। তবে কি আমাদের প্রত্যাশার পারদ এতখানিই উপরে উঠে গেছে যে কয়েকটি ম্যাচের ( আসলে মাত্র তিনটি। রিয়ালের সাথে দুটি আর তার আগে এসি মিলানের সাথে একটি) খারাপ ফলাফল আমরা মেনে নিতে পারছি না। আর পারবই বা কিভাবে? আমরা তো এমন বার্সাকে দেখে অভ্যস্ত নই। তবে আমরা কিন্তু কালকের বার্সাকে দেখেও খুব একটা অভ্যস্ত নই। নিকট অতীতে এমন মাত্রার ফুটবল বার্সা কবে খেলেছে মনে করতে পারছিনা। বার্সার গুরুত্বপূর্ণ খেলা কখনো মিস হয়না আমার। আর্সেনালের সাথে ৪-০ গোলের জয় কিংবা বেয়ার লেভারকুজেনের সাথে মেসির বিখ্যাত ৫ গোলের ম্যাচের কথা মনে রাখলেও বলতে হচ্ছে গতকালের ম্যাচ ছিল এসব কিছুর থেকেও একটু বেশি।
নিউয়র্কের একটি হাসপাতাল। সেই স্পেন থেকে একজন শান্ত চেহারার ভদ্রলোক এসেছেন মুখের লালা গ্রন্থির ক্যান্সার নিরাময়ের উদ্দেশ্যে। আপাত শান্ত মানুষটি তার নিজের যুদ্ধের চেয়ে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছেন তার শিষ্যদের নিজেদেরকে ফিরে পাবার যুদ্ধকে। নিজের কেবিনে টিভিতে দলের খেলা দেখছেন। শিষ্যদের একের পর এক পরাজয় দেখছেন। রিয়ালের সাথে পরপর দুটো এল ক্লাসিকোতে পরাজয়। সেই দুটো হারের একটা তাদেরকে ছিটকে দিয়েছে কোপা ডেল রে থেকে। অন্যটি লীগ ম্যাচ হওয়াতে ক্ষতি পয়েন্ট টেবিলে হয়নি। ক্ষতি যা হবার তা হয়েছে মনোবলে। ঝড় যা যাবার তা গিয়েছে মানসিক শক্তির উপর দিয়ে। কিন্তু তার থেকে বড় সমস্যা হয়ে মানে জীবন-মরণ সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের প্রথম লেগে মিলানের মাঠে ২-০ গোলের পরাজয়। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসে প্রথম লেগে ২-০ তে পিছিয়ে থেকে পরের রাউন্ডে ওঠার নজির যে আর নেই। জিততে হলে, নিজেদেরকে পরের রাউন্ডে নিতে হলে ইতিহাস তৈরী করতে হবে। ভদ্রলোক অস্থির। না শিষ্যদের যোগ্যতা নিয়ে নয়। সে অস্থির দলের ফর্ম নিয়ে, মানসিকতা নিয়ে। জরদি রৌরা কে নিজের কেবিন থেকে বসে বসে কত কিছুই যে বলেছেন আজকের ম্যাচের জন্য। ইতিহাস যে গড়তেই হবে। বার্সা যে এতগুলো দিন ইতিহাস গড়েই পথ চলেছে। সোনালী ইতিহাসের এই সুন্দর দিনগুলো এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যেতে পারে না। টিটো ভিলানোভা নিজের কেবিনে বসে স্বপ্ন দেখছেন বার্সা পারবে।
সবাই তাকে বলে ক্ষুদে জাদুকর। পরপর ৪ বার ফিফা বর্ষসেরা বলেই নয়, ঘাসের মাঠে ফুটবলকে তুলির মত করে নিজের ইচ্ছামত ব্যবহার করে অসম্ভব সব শিল্পকর্ম উপহার দেবার জন্যই তার উপরে সবার মনোযোগ সবথেকে বেশি। স্যানসিরোতে পারেননি। পারেননি বার্নাব্যু তেও। দলীয় সাফল্যকে ব্যক্তিগত অর্জন থেকে সবসময় আগে রাখেন বলে এই লিটল ম্যাজিসিয়ান আপাত অর্থে ব্যর্থ। তাকে বোতল বন্দী করে রাখার ফর্মুলা যে এখনো কেউ পায়নি সেটা প্রমাণের বাকি আছে যে। কিন্তু সব কিছুর পরেও কোথায় যেন একটা সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। ৫৬ গোল করে নিস্টলরয়ের পাশে বসে আছেন চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ২য় স্থানে। সামনে শুধু রিয়াল লিজেন্ড রাউল। ৭১ গোল হতে এখনো অনেক বাকি। কিন্তু তার মনে এসব কিছুই জায়গা পায় না। তার শুধু একটাই কথা – ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। এসি মিলানের সাথে ম্যাচটা তাই তার কাছে অগ্নি পরীক্ষার সমতুল্য। লিওনেল মেসি মাঠে নামলেন সেই অগ্নি পরীক্ষায় পাশের প্রত্যয় নিয়ে। একই আশায় বুক বাধলেন দ্য ব্রেইন- ইনিয়েস্তা, দ্য মায়েস্ট্রো- জাভি। সাথে সামনে আছে ভিয়া। ফেব্রেগাসকে বেঞ্চে বসিয়ে রৌরা বুঝালেন ট্যাক্টিসে তিনি মোটেও কম যান না। খেলা শুরু হল।
সেন্টার করলো মিলান। বড় জোর ৩ থেকে ৪ টা পাস। বল মাঠের বাইরে। প্রথম মিনিটেই ফুটবল বার্সার খেলোয়াড়দের পায়ে। শুরু হল অসাধারণ ‘প্রেসিং ফুটবল’। মাঝমাঠ উঠে এল মিলানের সীমানায়। ডিফেন্সে শুধু মাসচেরানো আর পিকে কে রেখে বাকি সবাই মিলানের অর্ধে। রাইট ব্যাকে দানি আলভেস আর লেফট ব্যাকে জর্দি এলবা রোবটের মত খালি উপরে নীচে উঠানামা করতে থাকলো। বল হারালেই তার দখল পাবার জন্য সে কী ব্যগ্রতা। নিজেদের সম্পূর্ণ উজাড় করে দিলো বার্সার খেলোয়াড়রা। মিলান শুধুই দর্শক। তবে ন্যু ক্যাম্পের দর্শকদের মত তারা ঠিক উপভোগ করতে পারছে না এই অনুপম শিল্পিত ফুটবল। তারা বল পাচ্ছে না। পেলেও ৩ থেকে ৪ পাসের বেশী রাখতে পারছে না। আজকে মেসি কে একটু অন্যরকম লাগছে তাদের কাছে। সে বল নিয়ে খুব একটা ড্রিবল করছে না। পাস দিয়ে দিচ্ছে। আর এই হতচ্ছাড়া দানি আলভেসের কি একটুও ক্লান্ত লাগেনা? কোথায় নাই সে। আদতে রাইট ব্যাক কিন্তু খেলছে একজন উইংগারের মত। হচ্ছেটা কি এসব? ম্যাসমিলানো এলেগ্রি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। এভাবে কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই গোল!। খেলার বয়স তখন ৪ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড। বক্সের একটু বাইরে মেসি। চারপাশে ঘিরে আছে ৪ জন প্লেয়ার। সামনে দুজন আর দুই পাশে দুইজন। এর মধ্যে মেসিকে বল দেবার জায়গা খুব কম। আর দিলেও ড্রিবল করতে পারবেন না জাদুকর। তবুও মেসিকে বল দিলো জাভি। ছোট্ট মানুষটা এক পা দু পা আগালেন। সামনে ইতালিয়ান প্রাচীর। বল নিয়ে বের হবার উপায় নেই। হালকা একটু ডানে ঝুঁকলেন। উদ্দেশ্য দেখে ডিফেন্ডার ভাবলো হয়তো ডান দিয়ে বের হতে চাচ্ছেন। সেও একটু ডানে কাত হল। মাঝখানে দেখা গেল হালকা একটা ফোঁকর। ব্যস এটুকুই। বা পায়ে আচমকা বাঁকানো শট নিলেন জাদুকর। বল ঠিক তার নির্দেশ মত চলে গেল জালে। গোলললললল। মন্ত্রমুগ্ধ ন্যু ক্যাম্প। শিহরিত ভক্তরা। আর হতভম্ব মিলানের কিপার অব্বিয়াতি। কি থেকে কি হল কেউ জানে না। সে শুধু দেখলো বল তার ডান কানে বাতাস লাগিয়ে ডান পোস্টের কোণা দিয়ে জালে আশ্রয় নিল। বার্সা ১ মিলান ০।
এখনো ১ গোলের ঋণ। বার্সা চেষ্টা করে যাচ্ছে। মিলান ভীষণ ভাবে রক্ষণাত্মক। যে করেই হোক গোল খাওয়া যাবে না। ১৩ মিনিটে ইনিয়েস্তার ভলি অসাধারণ দক্ষতায় বাঁচিয়ে দিল আব্বিয়াতি। প্রেসিং, পাস, অনেক উপরে উঠে মিলানের ডিফেন্সে খেলা সব কিছুই চলছে। বার্সার আক্রমণে দিশেহারা মিলান। ঠিক সে সময়েই আচমকা একটা অভাবনীয় সুযোগ চলে আসলো মিলানের স্ট্রাইকার নিয়াং এর সামনে। খেলার তখন ৩৯ মিনিট। বার্সার সবাই সামনে। পিছনে সবেধন নীলমণি মাসচেরানো। মাঝমাঠের খেলোয়াড় থেকে পুরোদস্তুর ডিফেন্ডার হয়ে যাওয়া এই খেলোয়াড়ের বড় গুণ সে খুব ভালো স্ন্যাচার এবং ভালো ম্যাচ রিডার। কিন্তু মাঝে মাঝেই জনাব ভুল করে বসেন। ঠিক তেমনি একটা ভুল তিনি করলেন ৩৯ মিনিটের সময়। মিলানের গোল লাইনের কাছ থেকে ক্লিয়ার হয়ে আসা বল এলো মাঝ মাঠে নিয়াং এর উদ্দেশ্যে। ছোটখাটো শরীরের মাসচেরানো গেলেন ব্যাক হেড করে বলটা ভালদেসের কাছে দিয়ে দিতে। পারলেন না। দূর্বল হেডে বল বেশী দূর গেলো না। নিয়াং ফাকায় বল পেয়ে গেলো। তার সামনে এখন শুধু ভালদেস। না শুধু ভালদেস কেন, তার সামনে বিশাল খালি একটা পোস্টও আছে। ন্যু ক্যাম্প ভয়ে জড়সড়। সমর্থকদের কপালে ভাঁজ। গোল হয়ে গেলেই সব শেষ। অ্যাওয়ে গোল হয়ে গেলেই সর্বনাশ। বার্সাকে তখন ৩ টা দিতে হবে। এতসব চিন্তা তরুণ নিয়াং এর মাথায় ছিল কিনা কে জানে, তবে সে ভালদেসকে পরাস্ত করতে পারলেও ভাগ্যকে হারাতে পারলো না। ভালদেসকে ভাগ্যের দয়া কামনা করিয়ে সে যে শট নিলো তা ডানপোস্টে লেগে ফিরে এল। নিয়াং গোল বঞ্চিত। মিলান বঞ্চিত। ন্যু ক্যাম্প হাঁফ ছেড়ে বেঁচে শান্তি পেল।
ফিরতি আক্রমণেই আবার গোল। আবারো সেই খুদে জাদুকর। আবারো শট। বা পায়ের গোলার মত শট। তবে এবার মাটি ঘেঁষে। ডিফেন্ডারের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে। খেলার তখন ৪০ মিনিট। মিলান বক্সের একটু বাইরে ইনিয়েস্তা দিল মেসিকে। যদিও রিপ্লে তে দেখা গেছে পাস দেবার সময় মেসি অফসাইডে ছিলো। তাতে কি? আজ যে ভাগ্য বার্সার পক্ষে। এবার আবারো ছোট এক পা দু পা আগিয়ে আচমকা শট। গতকাল মেসি যেন পণ করেছিলো বক্সের বাইরে সে বেশী একটা ড্রিবল করবে না। সবাই মেসিকে এমন অবস্থায় ড্রিবল করতে দেখেই অভ্যস্ত। কিন্তু গতকাল ছিল ভিন্ন একটা দিন। গতকাল মেসি যা চেয়েছে তাই হয়েছে। ন্যু ক্যাম্প শোধ করে দিল স্যানসিরোর ঋণ। স্কোর লাইন ২-২। এরপর ১০ মিনিটের ব্রেক।
সেকেন্ড হাফে মিলান নামলো গোল করার মানসিকতা নিয়ে। পজিটিভ না খেলে তখন উপায় নেই। স্কোর সমান থাকলে টাইব্রেকার হবে। আর বার্সার মাঠে একটা গোল দিতে পারলেই সব কিছু শেষ হয়ে যায়। মিলান এই প্রথমবারের মত আক্রমণে। এবার খেলা হচ্ছে বার্সার সীমানায়। কিন্তু জমছে না মিলানের আক্রমণ। তার মধ্যে ১০ মিনিট যেতে না যেতেই আবার গোল। জাভির পাস থেকে এবার ভিয়া। নিখুঁত ফিনিসিং। একজন বিশ্বমাপের স্ট্রাইকারের কাছ থেকে সেরকম গোল। আব্বিয়াতির কিছুই করার নেই এবারো। তবে এবার ভুলটা ছিল মিলান ডিফেন্ডার কন্সট্যান্টের। বল ক্লিয়ার করতে তো পারলেনই না বরং ভিয়া কে অনসাইড রাখলেন। বার্সা ৩ মিলান ২। মিলানের সামনে এখন একটাই উপায় যেকোন মূল্যে একটা গোল দিতেই হবে। মিলান মরিয়া। বার্সা ডিফেন্সে এলোমেলো। তবুও গোল হচ্ছে না। মিলান শেষ চেষ্টা করলো। সোলে মুনতারি আর রবিনহো নামলেন। খেলায় গতি আসলো। শেষ ১৫ মিনিট মিলানের চাপে বার্সা বেশ বিপদে। এরই মধ্যে রবিনহোর শট অনেক কষ্টে ব্লক করে নিশ্চিত বিপদ বাঁচালেন জর্দি এলবা। পুয়োল এসেছেন অবশ্য আগেই মাসচেরানোর জায়গায়। আর ভিয়ার জায়গায় সানচেজ। তবুও ঠিক শান্তিতে থাকতে পারছে না ন্যু ক্যাম্প। খেলা চলছে এখন ইনজুরি সময়ের। রবিনহোর শর্ট ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে কাউন্টার এটাক করলো মেসি। সামনে শুধু তিনজন ডিফেন্ডার। মেসি অপেক্ষা করলো এলেক্সি সানচেজের জন্য। ডান প্রান্তে সানচেজ বল পেলো। ক্রস করলো বায়ে। কাকে করলো সে হয়তো নিজেও জানে না। পেদ্রোর থাকার কথা ওখানে। কিন্তু বল পেলো জর্দি এলবা। কাউন্টার এটাকের শুরুতেই নিজেদের বক্সের একটু সামনে থেকে দৌড় শুরু করেছিলো এই তরুণ লেফট ব্যাক। প্রায় ৯০ পা দৌড়ে সে যখন বল নিলো তখন তার সামনে শুধু আব্বিয়াতি। দ্য ফিনিশার মুডে বল আব্বিয়াতির বা পাশ দিয়ে জালে জড়িয়ে দিয়েই সে মেতে উঠলো বিজয় উল্লাসে। তখন নিশ্চিত হয়ে গেছে বার্সার জয়। আর যে সময় নেই। খেলার ৯১ মিনিটে ৯০ পা দৌড়ে যে গোল দিলো জর্দি এলবা তা অনেকদিন মনে থাকবে ন্যু ক্যাম্পের সবার। জর্দি এলবার এই গোল যেন পুরো বার্সা শিবিরের দৃঢ় মানসিকতা আর জেতার স্পৃহার প্রতীক। একটা দল যখন সব ভুলে এভাবে খেলে তখন তাদের হারায় সাধ্যকার? আর দলটা যদি হয় বার্সা তখন তো আরও অসম্ভব হয়ে যায় কাজটা।
খেলা শেষে ম্যাসমিলানো এলেগ্রির কন্ঠে তাই হতাশা। দার্শনিকের মত তার উপলব্ধি, ‘ফুটবল কখনো কখনো সেন্টিমিটারের খেলা। আমাদের শট এক সেন্টিমিটারের জন্য পোস্টে লেগেছে। মেসির শট ডিফেন্সের দুই পায়ের সামান্য ফাঁকা দিয়েই গোলে গেছে’।
সব কিছুর পরেও ১৩ মার্চ মঙ্গলবারের রাতের আনন্দ সেন্টিমিটারের নিক্তিতে কেন কিলোমিটারের দাড়িপাল্লাতেও মাপা যাবে না। রাতটা যে শুধুমাত্র চ্যাম্পিয়ন্স লীগে টিকে থাকার লড়াইয়ে জেতার রাতই নয়, ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করা একজন মানুষের মুখে হাসি ফুটানোরও রাত।
editor's pick
latest video
news via inbox
Nulla turp dis cursus. Integer liberos euismod pretium faucibua