মাননীয় সংসদ সদস্যগন আমরা ক্ষমাপ্রার্থী
লেখাটা শুরু করার আগে অনেকক্ষন চিন্তা করছিলাম যে কিভাবে শুরু করবো। বেশ কয়েকবার শুরু করতে গিয়েও থেমে গেলাম। ভয়ে চিন্তা শক্তি লোপ পাচ্ছিলো বারবার। পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন একটা কিছু লিখতে এত চিন্তা করার কি আছে? ভয় পাবার তো প্রশ্নই নেই। আপনি ঠিক বলেছেন পাঠক। একটা সময় ছিল এমন। যখন জাতির বিবেক বুদ্ধিজীবিরা তাদের কলমের মাধ্যমে, লেখার মাধ্যমে জাতিকে জাগ্রত করতেন, নতুন স্বপ্ন দেখাতেন। সেই লেখা পড়ে আমরা শিহরিত হতাম। স্বপ্নের পিছনে ছুটতাম না রীতিমত দৌড়াতাম। কিন্তু সেই দিন গত হয়েছে তাও অনেক বছর হল। এখন বুদ্ধিজীবিরা সবাই একসুরে কথা বলেন না। তারা বেশিরভাগই এখন দুই দলে বিভক্ত। একটি বিষয় নিয়ে একদল চিৎকার চেঁচামেচি করলেও অপর দল নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মত আচরণ করেন। দেখে মনে হয় কোন একটি বিষয় একসাথে দুই দলের বুদ্ধিকে নাড়িয়ে দেবার মত শক্তি অর্জনে অক্ষম। যাইহোক আমরা ভয়ের কথা বলছিলাম। লেখালেখি করতে আবার ভয় আছে নাকি? আছে পাঠক আছে। ব্যাপক ভয়ের কারণ আছে। কখন কোন সময় কলমের খোঁচায় কারও বিশেষ অধিকার ক্ষুণ্ণ করে অনর্থ করে বসবো না তার কি গ্যারান্টি আছে? তবে আশার কথা হলো এমন দেশে বসে লিখছি যারা চিন্তা চেতনায়, মেধা ও মননে আমাদের থেকে কয়েকশ বছর পিছনে। কোন দেশ আর কেন পিছনে সেটা লেখার শেষ ভাগের জন্য তোলা থাক। সে এক কৌতুকের বিষয় বটে।
‘ধান ভানতে শিবের গীত’ মানুষ কয়টা গায় জানি না। তবে আমি অনেক বেশিই গেয়ে ফেললাম বলে মনে হচ্ছে। আচ্ছা এখন তবে কাজের কথায় আসি। কিন্তু কাজের কথায় ঠিক আসতে পারছি না। আবারো ভয় করছে। আগে জানতাম দেয়ালেরও কান আছে। ইদানিং মনে হচ্ছে শুধু দেয়াল না দরজা, জানালা সহ সব কিছুরই মনে হয় অনেক গুলো করে কান। একটু অপেক্ষা করুন পাঠক জানালাটা ভালো করে বন্ধ করে বসি। হুমম শান্তি। এবার আসল ঘটনা বলি। ঘটনা খুব বড় কিছু না। ঘটনাটা হলো গত কয়েকদিন এর সংবাদপত্রের একটা বিশেষ খবর পড়ে কেনো যেন মনে হলো আমার উচিত মাননীয় সংসদ সদস্যদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। এরপর ঐ খবরে দেশের বিভিন্ন শ্রেনীর, নানা পেশার মানুষের মন্তব্য পড়ে মনে হলো, না শুধু আমার একার না তাদেরও মাননীয় সংসদ সদস্যদের নিকট ক্ষমা চাওয়া অতীব জরুরী। পাঠক আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে আমরা আবার কি অপরাধ করলাম। খামোশ!! আপনি কি অপরাধ করেছিলেন তা আমি জানি না। আপনি জানেন। তবে আপনি নিজের অপরাধের মাত্রাটা কেমন তা একটু নিচের ঘটনার সাথে মিলিয়ে নিলেই বুঝতে পারবেন ক্ষমা চাওয়া কেন এবং কত গুরুত্বপূর্ণ।
জনাব অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, নামটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে অনেকগুলো প্রিয় নামের তালিকায় উপরের দিকের একটি। তিনি আমাদের সবার শিক্ষক। কারো প্রত্যক্ষ কারো পরোক্ষ। এই সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষটি সাধারণত নিভৃতে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। অগোচরে তার স্বপ্নপূরণের কাজ করে যান। জাতির কাছে তার চাহিদা একটাই। তিনি আলোকিত মানুষ চান। আমরা তাকে সম্মানের সাথে ‘স্যার’ বলে ডাকি। কিন্তু আড়ালে থাকা এই মানুষটি হঠাৎ করে একেবারে লাইম লাইটে চলে আসলেন। যেমন তেমন লাইট না। যাকে বলে কিনা একেবারে স্পট লাইটের নিচে চলে আসা। টি আই বি-র একটি অনুষ্ঠানে তিনি খুব সংক্ষিপ্ত কিন্তু দেশ তোলপাড় করা একটি বক্তব্য দেন গত শনিবার। বক্তব্যটি কি সেটা পাঠক মাত্রই অবগত আছেন। তারপরও আমি উল্লেখ করছি। বক্তব্যের শুরুতে দুর্নীতি কী, তা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘চোর যে চুরি করে, ডাকাত যে ডাকাতি করে, সেটি কি দুর্নীতি? আমার ধারণা, এটা দুর্নীতি নয়। কারণ, দুর্নীতি শব্দের মধ্যে আরেকটি শব্দ লুকিয়ে আছে। শব্দটি হলো ‘নীতি’। চোর বা ডাকাতের কাজ ঠিক দুর্নীতি নয়। কারণ, তাদের কোনো নীতিই নেই। সুতরাং, দুর্নীতি সেই মানুষটি করে, যার নীতি আছে। একটা উদাহরণ দিই। যেমন—যদি একজন মন্ত্রী এই বলে শপথ নেন যে তিনি শত্রু-মিত্র ভেদাভেদ না করে সবার প্রতি সমান বিচার করবেন, কিন্তু পরে তিনি সেটি না করেন, সেটা হবে দুর্নীতি।’ (সূত্রঃ প্রথম আলো)
এই বক্তব্যটি নিয়ে আমাদের মহান জাতীয় সংসদে গত রোববার এক নাতিদীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আলোচকবৃন্দ সকলেই উক্ত বক্তব্যের জন্য জনাব অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদকে সংসদে এসে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। পাঠক চলুন একটু দেখি আমাদের সম্মানিত শিক্ষক কি ভুল করেছেন। প্রথমে আমরা নিজেরা ভুল না ধরে আমাদের অতি সম্মানিত সাংসদগন যেসকল গুরুতর ভুল ধরেছেন তাতে একটু চোখ বুলানো যাক।
স্বতন্ত্র সাংসদ ফজলুল আজিম বলেছেন, ‘শনিবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি অনুষ্ঠানে একজন বুদ্ধিজীবী সাংসদ ও মন্ত্রীদের চোর-ডাকাত বলে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন। তাঁর এ বক্তব্য দুঃখজনক। তিনি বলেন, ‘এসব বক্তব্য গণতন্ত্রের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। আমরা এখানে জনগণের রায় নিয়ে এসেছি। অনেকেই আছি যারা বারবার নির্বাচিত হয়েছি। আমরা কেউ ধোয়া তুলসী পাতা নই। ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। সে জন্য আইন আছে। ভুল করলে জনগণ বিচার করবে।’ (অতি সত্য কথা। এসব বক্তব্য কখনোই গনতন্ত্রের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে না। রাজনীতিবিদদের হাতে নিহত গনতন্ত্রকে বাঁচানোর জন্য এখন মসির চেয়ে বড় কোন অসি আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আর জনাব আপনি তো ঠিকই বলেছেন আপনারা ধোয়া তুলসি পাতা নন। আপনারা হলেন দুধে ধোয়া তুলসি পাতা। সুতরাং আপনাদের ভুল-ভ্রান্তি যতই থাকুক না কেন আমরা কেউ টু-শব্দটি পর্যন্ত করতে পারবো না। কথার শেষ ভাগে যা বলেছেন সত্যি বলছি না হেসে পারলাম না। আমরা জনগন বিচার করবার কেউ না। বিচারতো করবেন আপনারা। যদি আমরা বিচার করতে পারতাম তবে আপনারা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েও কুল পেতেন না।)
এরপর সাংসদ মুজিবুল হক বলেছেন, ‘এ মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। দেশের সকল অর্জনের পেছনে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা রয়েছে। জনগণ ভোট দিয়ে সাংসদদের নির্বাচন করেছেন। অধ্যাপক আবু সায়ীদকে আমরা শ্রদ্ধা করি। কিন্তু এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ভোটারদের অবমাননা করেছেন।’ (ভোটারদের অবমাননা?? আবারো হাসালেন জনাব। ভোটারদের কোন মান আছে নাকি?? অপমান, অবমাননা শব্দ গুলো সব আপনাদের জন্য। আমরা এগুলো কি জিনিস তাই জানিনা। এগুলা খায় না মাথায় দেয় তাই বুঝতে পারছিনা। না হলে তো বারবার আপনাদেরকে ভোট দিয়ে আমরা নির্বাচিত করতাম না। যদিও জানি………থাক কি জানি সেটা না বললেও চলবে।)
এরপর জনাব শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘এই বক্তব্য গণতন্ত্র ও সংসদের ওপর আঘাত। বুদ্ধিজীবীরা জাতির বিবেক হয়েছেন। বিপদে তাঁদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায় না। কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে, তবে প্রমাণসহ উপস্থাপন করেন। সেই মন্ত্রী পদত্যাগ করবেন। কিন্তু ঢালাও অভিযোগ করা যাবে না’। (মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ?? কি সাংঘাতিক কথা। এই যুগে মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কিছু বলাও তো নরকে যাবার সমতুল্য পাপ।)
শেখ সেলিম অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘যেসব বুদ্ধিজীবী সরকারের সমালোচনা করেন, তাঁদের আয়ের উৎস কী, তা খতিয়ে দেখেন। এক-এগারোতে তাঁরা কী করেছেন, তা আমাদের জানা আছে। একজন শিক্ষক এত দামি গাড়িতে কী করে চড়েন? নির্বাচিত সরকার থাকলে তাঁদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। অনির্বাচিত সরকার থাকলে তাঁরা পদ পান। এক-এগারোর পর ব্যবসায়ী, ছাত্র, শিক্ষকদের যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন তো তাঁরা একটি কথাও বলেননি, বরং সেই সরকারের প্রশংসা করেছেন।’ (এই বার ব্যাপারটা খোলাসা হয়েছে। সরকারের সমালোচক বুদ্ধিজীবিরাই তাহলে টার্গেট। এ প্রসংগে আজ বুধবার টি আই বি-র সংবাদ সম্মেলনে আবু সায়ীদ স্যার যা বলেছেন তা উল্লেখ না করে পারছিনা। ‘একজন শিক্ষকের এত গাড়ি-বাড়ি থাকার কথা নয়’, শেখ ফজলুল করিম সেলিমের এ বক্তব্যের উল্লেখ করে আবু সায়ীদ বলেন, ‘এ বক্তব্যে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। আমার কোনো গাড়ি-বাড়ি নেই। আমি দুই কামরার একটি বাসায় ভাড়া থাকি। আরেকটু বলতে গেলে, ম্যাগসাইসাই পুরস্কারটা না পেলে, সম্ভবত রক্ত পরীক্ষার টাকাটাও থাকত না।’ পাঠক চোখে পানি আসলেও সে পানিটা মুছবেন না।)
স্পিকারের দায়িত্ব পালনকারী আলী আশরাফ সাংসদদের বক্তব্যকে যথার্থ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের আকাশে কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে। সংসদকে অবমাননার মাধ্যমে দেশের জনগণ ও সংবিধানকে অবমাননা করা হয়েছে। এতে সাংসদদের বিশেষ অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। এটা বিচ্ছিন্ন কোনো বক্তব্য নয়। সে জন্য তাঁকে (আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ) বিশেষ অধিকার কমিটির মাধ্যমে নোটিশ করে আমরা এ সংসদে তলব করতে পারি। কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। তাঁকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ, সংসদকে অবমাননা করার অধিকার কারও নেই।’ (জনাব, আপনার চশমার পাওয়ারটা মনে হয় একটু পাল্টানো দরকার। আপনি গনতন্ত্রের আকাশে কালো মেঘ দেখছেন? আর আমরা জনগন জন্মলগ্ন থেকে হাবল টেলিস্কোপ দিয়ে খুঁজেও আকাশতো দূরের কথা গনতন্ত্রের কিছুইতো খুঁজে পাচ্ছিনা। তবে হ্যাঁ একটা কথা খাসা বলেছেন। সংসদকে অবমাননা করার অধিকার শুধু আপনাদের। এই অধিকারে হস্তক্ষেপ কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায়না।)
এবার আমরা দেখি যে স্যার আর কি কি ভুল করেছেন যা সাংসদবৃন্দ দয়াপূর্বক উল্লেখ না করে উনাকে বিশেষ সম্মান দেখিয়েছেন। আমার মতে স্যার প্রথম যে ভুলটা করেছেন তা হলো উনি ‘চোর’ এবং ‘ডাকাত’ এই দুটি শব্দ উল্লেখ করেছেন শুধু সমাজের বিশেষ দুটি শ্রেণীকে উল্লেখ করে। তিনি কেন শব্দ দুটি সংসদ সদস্য সহযোগে ব্যবহার করলেন না এটা নিয়েই তো তেনারা মাইন্ড করেছেন (মনে মনে আর কি)। যে চুরি করে সেইতো চোর। যে ডাকাতি করে সেই ডাকাত। এখন তেনারা চুরি ডাকাতি দুটোই করেন। আর একটু দায়িত্বশীল পদে গেলে (পদের নাম উল্লেখ করলাম না, পাঠক বুঝে নেন) পুকুর চুরি, সেতু চুরি, রেল ডাকাতি, ভূমি ডাকাতি সবই করেন। তাহলে স্যার আপনি কেন তেনাদের ঐ দুটি বিশেষ নিচু জাতের গোষ্ঠির সাথে এক কাতারে বসালেন?? যেখানে ঐ সাধারণ চোর-ডাকাত তাদের মেধার কাছে নস্যি। না, না এটা ঘোরতর অপরাধ।
স্যার, আপনার দ্বিতীয় ভুল। কোন বক্তব্য দেবার আগেরদিন বক্তব্যটা ফেসবুকে প্রকাশ করা দরকার। গনতন্ত্রের মানস কন্যা, পুত্র, নাতি পুতি দ্বারা অনুমোদিত হলেই কেবল সেটা বলা উচিত। ভবিষ্যতে স্যার দয়া করে এটা মনে রাখবেন।
স্যার, আপনি ভুলে গেছেন যে এটা কলি যুগেরও পরের যুগ চলছে। এই যুগে মানিক মিয়া এভিন্যুতে একটা সিনেমা হল আছে। যেখানকার সদস্য হতে হলে আপনার বিশেষ কিছু গুনাবলী থাকতেই হবে। যেমন আপনাকে চুরি, ডাকাতি, ঋণ খেলাপি, টেলিফোন বিল খেলাপি, মাইক্রোবাসে খুন, প্রকাশ্যে গোলাগুলি, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে পেটানো, কালো টাকার পাহাড় গড়া এবং সেই টাকাকে ফেয়ার এন্ড লাভলি ছাড়া সাদা করা সহ ইত্যাদি কাজে ব্যাপক দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এছাড়া দিনের পর দিন অনুপস্থিত থেকে বেতন ভাতা নেবার মন-মানসিকতা দেখাতে হবে। আর যদি বা বেড়ানোর জন্য কোনদিন উপস্থিত হয়েই পরেন তবে নিদেন পক্ষে কয়েকটি দৃশ্যে অভিনয় করতে ও বিশেষ কিছু সংলাপ দিতেই হবে। যেমন যে উদ্দেশ্যে আপনার এলাকার জনগন আপনাকে নির্বাচিত করে সেখানে পাঠিয়েছে তা ভুলেও একবারের বেশি উল্লেখ করবেন না। বক্তব্যের শুরুতে যতটা জোর গলায় ও আবেগ নিয়ে পারেন নিজ দলের প্রতিষ্ঠাতার জীবনী, তার অবদান, তার পরবর্তী কোন উত্তরসূরি থাকলে তার বৃতান্ত উল্লেখ করতেই হবে। এরপর একটু থেমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের তাপমাত্রা কমাতে বলতে হবে। কারণ আপনি এখন যা বলবেল তাতে উপস্থিত সবার রক্ত গরম হয়ে যাবে। এবার আপনি প্রতিপক্ষের প্রধান অভিনেতা থেকে শুরু করে যাদের কে মনে চায় তাদেরকে মনের সুখে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করবেন। আর বাংলা সিনেমার নায়ক-ভিলেনের মত (পাঠক পড়ুন নায়িকা-মহিলা ভিলেন) মারামারি (পাঠক পড়ুন চুলাচুলি) করতে পারলেতো কথায় নেই। ছবি সুপার হিট। আর স্যার, বিশেষ বিশেষ দিনে টেবিল চাপড়ানো সহ হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে হাই তোলার মত করে হাই বলার অভ্যাস করতেই হবে। স্যার, এত কষ্ট করে যারা এত জনকল্যানমূলক সিনেমায় অভিনয় করার দায়িত্ব পালন করে তাদের পর্যায়ে না এসে কি তাদের নিয়ে কথা বলা সাজে??
আর কি বলবো স্যার, আপনি এখনো বোকাই রয়ে গেলেন। আপনি প্যাঁচ দিয়ে কথা বলাও শিখেন নাই। আপনার উচিত ছিলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সমুদ্র জয়, নর্থ-নর্থ পুরষ্কার নিয়ে কথা বলা। জনৈক বিশিষ্ট অধ্যাপকের মত এইসব করতে পারলেই সরকারকে গ্লোডেন এ+ দিয়ে যদি কথা শুরু করতে পারতেন তাহলে তো আর এত হ্যাপা সহ্য করতে হয়না। দেশ রসাতলে যাক, আইনের শাসন বলে কিছুই না থাকুক, দ্রব্যমূল্যের ভারে জনগণ চাপা পরে মারা যাক, মানুষ নিজ বাসায় খুন হোক আর অফিসে ২৬ টুকরা হোক তাতে কি? ৫২ টুকরা যে হয়নি এটাইতো তার সৌভাগ্য স্যার। আইনশৃঙ্খলা যে স্মরণকালের মধ্যে সব থেকে ভালো অবস্থায় আছে তা কেন ভুলে যান? কেনো ভুলে যান কিছুদিন আগে আপনার সমগোত্রীয়দের কে গরম পানি সহযোগে লাঠি দিয়ে ধোলায় করার কথা। আকেলমন্দের জন্যতো ইশারায় যথেষ্ট ছিলো।
আপনার সবথেকে বড় ভুল কি জানেন স্যার? আপনি এই দেশে জন্মগ্রহন করেছেন। সারা জীবন ছাত্র-ছাত্রীদের মানুষ করার ব্রত নিয়ে চলেছেন। বই পড়ার সুযোগ করে দিতে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। আলোকিত মানুষ খুঁজেছেন। আপনি কোন পক্ষ নিয়ে কথা বলেননি। কোন মতবাদকে ধারণ করে কিছু বলেননি। নিজের বিবেক আর বিচার বুদ্ধি নিয়ে কাজ করেছেন। আপনি নিজের বিবেককে বিক্রি করে দেননি। কেন করেন নি স্যার?? কেন?? এটাই আপনার সব থেকে বড় অপরাধ। আপনি হয়তোবা ভুলে গেছেন জীবনানন্দ দাশের সেই বিখ্যাত কবিতা। আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি।
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ-
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা I
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই, প্রীতি নেই, করুণার আলোড়ন নেই-
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া I
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি-
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়
মহত সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয় !!
স্যার আপনাকে আর কিছু বলবোনা। আপনার কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় শুধু এটুকু বলবো যে, “মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়”- কথাটা কিন্তু আপনিই শিখিয়েছিলেন। আপনার শেখানো কথাটা সবসময় বুকে ধারন করি স্যার। আমার মত আপনার লক্ষ ছাত্র-ভক্ত করে। একজীবনে আর কিছু কি চাই স্যার আপনার? আপনার চাওয়া না থাকলেও আমরা চাই আপনি এভাবেই সত্যি উচ্চারণ করে যাবেন। আমাদের পথ দেখাবেন।
মাননীয় সংসদ সদস্যগন এবার আপনাদের পালা। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নেবার কিছু নেই। কারণ এই লেখার জন্য যদি আবার আমাকে সংসদে হাজির হতে হয়? সত্যি বলছি মহান সংসদের ভিতরটা নিজে চোখে দেখার ইচ্ছা অনেক দিনের। তবে কি জানেন আমি বা আমার মত লাখো জনতা যেদিন আসবো ক্ষমা চাইবার জন্য সেদিন কিন্তু জায়গা দিতে পারবেন না। ক্ষমার প্রসংগ এজন্যই আসলো যে অধ্যাপক আবু সায়ীদ স্যার এর যে কথাটার জন্য তাঁকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন তার থেকে কয়েক কোটি গুন খারাপ কথা আমরা প্রতিদিন আপনাদের উদ্দেশ্যে বলি। নাম উল্লেখ করেই বলি। কিন্তু আপনারা শোনেন না। কারণ আপনারা শুনে বোঝার মত যোগ্যতা রাখেন না।
পাঠক, এবার আপনার কাছ থেকে বিদায়। লেখার শুরুতে বলেছিলাম যে এমন একটা দেশে বসে লিখছি যারা আমাদের থেকে কয়েকশ বছর পিছিয়ে। হ্যাঁ পাঠক ইউকে-র জনগণ এখনো আমাদের মত প্রগতিশীল হতে পারেনি। তারা এখনো অন্যের বাক স্বাধীনতা নামক একটা ফালতু সেকেলে সংস্কৃতি ধরে রেখেছে। সত্যি সেলুকাস বড়ই পরিতাপের বিষয়।
editor's pick
latest video
news via inbox
Nulla turp dis cursus. Integer liberos euismod pretium faucibua