বুবা ও তার পরীর বাচ্চা
হলি-ফ্যামিলি হাসপাতালের বাইরের রাস্তার ফুটপাতে বসে আনমনে তাকিয়ে আছে সাগর। হাতের আধখাওয়া সিগারেটটা দূরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজের কষ্টটাকে দূর করার ব্যর্থ চেষ্টা করে সে। কিছুই ভালো লাগছে না তার। বারবার চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। কানের কাছে বাজছে খুব মিষ্টি একটা ডাক- ‘বুবা’। এই ছোট্ট আর অসম্ভব মায়া ও আদর জড়ানো ডাকটা সে প্রতিদিন শুনতে পায় তার ২ বছরের মেয়ে নবনীর মুখে যাকে সে আদর করে ডাকে পরীর বাচ্চা বলে। এই পরীর বাচ্চা নামের পিছনেও একটা ইতিহাস আছে। নীলার সাথে পরিচয়ের ২য় দিন থেকেই সাগর মনে মনে নীলাকে পরী বলে ডাকতো। এর পরের ঘটনা প্রবাহে তার আর নীলার সংসারে জীবনের সব উজ্জ্বলতা, স্বপ্নের সব রঙ নিয়ে জন্ম নবনীর। তাই নবনীকে ও আদর করে পরীর বাচ্চা বলেই ডাকে। বুবা, বুবা, বুবা এই শব্দটাই এখন খালি তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। মাঝে মাঝে নবনী বুবা শব্দটা একবারে বলতে পারতো না। বলতো, বু-বু-বু- বা। শুনে মেয়েকে কোলে নিয়ে গালে একটা চুমু দিয়ে ওকে নকল করে সাগর বলে উঠতো, আমার পরীর বা-বা-বা চ্চা। নবনী কি বুঝতো কে জানে। হেসে কুটিকুটি হয়ে বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতো।
মেয়ের কথা ভাবতেই আবার বুকটা হু-হু করে ওঠে সাগরের। এক দৌড়ে ছুটে যায় হাসপাতালের ৪ তলায়। আইসিইউ এর বাইরে নির্বাক হয়ে বসে আছে নীলা। গত ২ দিন আইসিইউ এর সামনে থেকে কেউ তাকে একবিন্দু নড়াতে পারেনি। গালের দুইপাশে কান্নার দাগ শুকিয়ে আছে। একমনে তাকিয়ে আছে অসীম শূন্যতার দিকে চোখে ভয়াবহ শূন্য দৃষ্টি নিয়ে। নীলার কাছে যেয়ে তাকে সাহস দেবার বা ভরসা দেবার মত কোন শক্তিই নেই সাগরের। গত ২ দিন সেও বাসায় যায়নি। ৪ তলা আর রাস্তা এভাবেই কেটেছে সময়। কখনো কখনো বাইরের কাঁচের দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে তার পরীর বাচ্চাটাকে দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। মাঝে মাঝে ডাক্তার এর সাথে কথা বলার জন্য গিয়েও ফিরে এসেছে এই ভয়ে যে যদি খুব খারাপ কিছু শুনতে হয়। ওর বন্ধু শিফাক আইসিইউ তে মেডিকেল অফিসার হিসাবে কাজ করে। গতকাল সে এসে কাঁধে হাত রেখে বলেছিল, “আরে এত ভেঙে পরছিস কেনো? নবনীর হঠাৎ প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হয়েছিল। ওর IRDS মানে ইনফ্যান্ট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম ডেভেলপ করেছে। আমরা তো সব চেষ্টাই করছি। ভাবিকে একটু দ্যাখ। ইনশাল্লাহ কিছু হবে না”। ও কিছু বলতে পারেনি। ছলছল চোখে শিফাকের হাত ধরে বলেছিল, “আমি, আমি ওকে একটু দেখবো রে শিফাক। আমি আমার মেয়েটাকে একবার একটু দেখবো”। বন্ধুর জন্য খুব খারাপ লাগলেও পেশাদারিত্বের খাতিরে শিফাক বলেছিল, “আজ মাত্র ১ম দিন। আজ না। সব ঠিক থাকলে কাল তোকে তোর মেয়ের কাছে নিয়ে যাবো। আজকের দিনটা ধৈর্য্য ধরে থাক সাগর”।
আজ সেই দিন। পুরো একটা দিন মেয়েকে না দেখে খুব অস্থির হয়ে আছে সাগর। নবনী হবার পর থেকে অফিসে বা বাইরে কোথাও খুব একটা অলস সময় কাটায়নি সে। ঐ পরীর বাচ্চার টানেই বাড়ি ফিরতো তাড়াতাড়ি। আসার পর মেয়েকে কোলে নিয়ে চুমু খাবার সময় নবনী ওর শার্টের পকেটে হাত দিত চকলেট এর আশায়। কোন কোন দিন ইচ্ছা করেই সাগর চকলেট রাখতো প্যান্টের পকেটে। নবনী চকলেট না পেয়ে মন খারাপ করলে সে তখন চকলেট বের করে দিত। ঐ সময় মেয়ের মুখের হাসিটা দেখে সে যে আনন্দ পেত তার বিনিময়ে মনে হয় সে তার সবকিছু দিয়ে দিতে পারে। আজ ২টা দিন সে মেয়ের হাসি দেখেনা। তার বুবা ডাক শোনে না। মেয়েকে জড়িয়ে আদর করে না। ভাবতেই কেমন জানি লাগছে ওর। ৪ তলায় এসে আইসিইউ-র সামনের রেলিং এ ভর দিয়ে নিচে তাকায় সাগর। নিচে বাগানে নবনীর বয়সী একটা মেয়ে খেলা করছে। ঠিক নবনীর মতই। সাগর আবার হারিয়ে যায় ওর মনের মাঝে থাকা স্মৃতির রাজ্যে। সাগর যখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতো তখন নবনী এসে ওর পা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে উঠতো, “বুবা, বুবা, বুবা”। এর মানে হলো এখন ভিতরে যেতে হবে। যদিও নীলার কড়া নিষেধ ছিলো সিগারেট নিয়ে বেডরুমে ঢোকা যাবেনা তবুও প্রথম প্রথম এটা মানলেও এরপর আর কেয়ার করতো না সাগর।
এখন সাগর অবচেতনে অপেক্ষা করছে কখন ওর পরীর বাচ্চা এসে ওর পা জড়িয়ে ধরবে। হঠাৎ কাঁধে একটা হাতের স্পর্শ পায় সে। শিফাক এসেছে।
শিফাকঃ “চল, নবনীকে দেখবি”।
সাগরঃ “ও কেমন আছে রে?” গলা ধরে আসছে সাগরের।
শিফাকঃ “ভালো। নিজে গিয়েই এবার দ্যাখ। তবে…”।
সাগরঃ “তবে কি??” ওর কন্ঠে প্রচন্ড ভয় মেশানো উদ্বেগ।
শিফাকঃ “আগেই বলে দিচ্ছি ওখানে আরো অনেক খারাপ রোগী আছে। তুই নবনীকে দেখে ভেঙে পড়িস না”।
সাগরের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায় শিফাকের শেষ কথায়। এলোমেলো পায়ে শিফাকের হাত ধরে ও আইসিইউ তে ঢোকে। যাবার সময় ওরা নীলার সামনে দিয়ে গেলেও নীলা একবারো চোখ তুলে তাকায় না পর্যন্ত।
আইসিইউ তে সবাই খুব ব্যস্ত। সাগরের চোখ শুধু খুঁজতে থাকে নবনীকে। ভিতরে ৫ নাম্বার বেড এর কাছে এসে শিফাক সাগরকে দাড় করায়। সাগর নবনীকে দেখে। ওর পরীর বাচ্চাটাকে দেখে। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে নবনীর গায়ে লাগানো হাজারো মেশিনের দিকে। আস্তে করে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেবার চেষ্টা করে মেয়েকে। শিফাক হাতটা ধরে বলে, “এখন না। বাসায় গেলে যত খুশি আদর করিস”। হঠাৎ সাগরের চোখ আটকে যায় নবনীর গলায়। ওখানে একটা ছিদ্র করে একটা নল লাগানো হয়েছে। ওর ছোট্ট মুখটাতে কি যেন একটা চাপা কষ্ট। সাগর আর সহ্য করতে পারছে না। শিফাক ওর হাতে সাগরের হাতের চাপ অনুভব করতে থাকে। বুঝতে পারে সাগর ভেঙে পড়তে শুরু করেছে মেয়ের অবস্থা দেখে। জোর করে সাগরকে টেনে আইসিইউ-র বাইরে নিয়ে আসে ও। টলতে টলতে আইসিইউ –র বাইরে এসে মাটিতে বসেই ডুকরে কেঁদে ওঠে সাগর। কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে, “শিফাক, এটা আমি কি দেখলাম? তোরা কি করেছিস আমার মেয়ের? ওর গলায় কি হয়েছে? শিফাক কথা বল”।
শিফাকঃ “সাগর শান্ত হ। ওটা কিছু না। নবনী যখন হাসপাতালে আসে তখন ও শ্বাস নিতে পারছিলো না। তাই ওর শ্বাসনালী ছিদ্র করে টিউব লাগানো হয়েছে। ওকে বাঁচাতে এটা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। ও আবার যখন নিজে থেকে শ্বাস নিতে পারবে তখন আমরা টিউব খুলে দিব”।
সাগরঃ “ও কবে আবার শ্বাস নিতে পারবে? আমার মেয়ে আবার কবে আমাকে বুবা বলে ডাকবে??” এবার চিৎকার করে কেঁদে ওঠে সাগর।
শিফাকঃ “দেখ তুই এত ভেঙে পড়িস না। আমরা আশা করছি কাল আমরা টিউব খুলে দিয়ে দেখবো। আর কাল নবনী যার আন্ডারে আছে মানে প্রফেসর হাসান তোর সাথে কথা বলবেন। আমি উনাকে বলেছি তুই আমার খুব কাছের একজন। তুই ভাবিকে বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে যা। কাল আসিস। ভাবি এভাবে থাকলে নিজেই অসুস্থ্য হয়ে যাবে”।
সাগরঃ “আমি বাসায় যেতে পারব না। বাসায় গেলেই আমি সবখানে আমার মেয়ের ছবি দেখবো। আমি সারা বাড়ি আমার মেয়েকে খুঁজবো। না আমি বাসায় যাব না”।
শিফাকঃ “কথা যখন শুনবি না থাক এখানে। আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি। পারলে কিছু মুখে দিস”।
শিফাক চলে যাবার পর সাগর নিচে যেয়ে সিগারেট ধরায়। একরাশ ধোয়া টেনে নিতেই ওর মনে পরে ও যখন রুমে সিগারেট ধরাতো তখন নবনী ওর লাইটার টা নিয়ে জ্বালানোর অনেক চেষ্টা করতো। শেষে না পেরে লাইটার ছুড়ে ফেলে বাবার বুকে এসে ঝাপিয়ে পরে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদত। সাগর নিজের অজান্তেই ওর বুকে হাত দেয়। না। বুকটা খালি। এখন বুকে নবনী নেই। তারপরও সাগর বুকে মেয়ের স্পর্শ অনুভব করার চেষ্টা করে।
পরেরদিন সকাল ১০টা। প্রফেসর হাসান এর রুমের সামনে সাগর আর নীলা দাঁড়িয়ে। ডাক্তার এর সাথে দেখা করতে যাবার কথা শুনে এই প্রথম নীলা আইসিইউ-র সামনে থেকে উঠেছে। প্রফেসর হাসান দুজনকে আসতে বললেন। রুমে ঢুকে চেয়ার টেনে বসতে যাচ্ছিলো সাগর। তাকে হঠাৎ থামিয়ে দিলেন প্রফেসর হাসান।
প্রফ. হাসানঃ “দাঁড়াও। তুমি বসবে না। এই মেয়ে তুমি বসো”।
সাগর আর নীলা দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বয়স্ক এই মানুষটার দিকে। চোখে বিরক্তি আর বিস্ময়। উনি ওদের দৃষ্টিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বলে যেতে লাগলেন, “তোমাদের মেয়ের চেয়ে একটু বড় আমার একটা নাতি আছে। তাই তোমাদের কে তুমি করে বলছি। আর তোমাদের মত বাবা-মা কে আপনি বলে সম্মান দেখানোর কোন প্রশ্নই আসে না। তোমরা শুধু জন্মই দিতে পেরেছো। কিন্তু সন্তানের ভালোটা চিন্তা করতে পারোনি। আর একটু হলেই তো মেয়েটাকে মেরে ফেলতে তোমরা”।
এবার সাগর আর থাকতে পারেনা। চরম বিরক্তি নিয়ে বলে, “মানে?? আপনি কি আমাদের সাথে রসিকতা করার জন্য ডেকে এনেছেন?”
প্রফ. হাসানঃ “ইয়াং ম্যান, মেয়েকে অনেক বেশি ভালোবাসো তাই না??”
সাগরঃ “মানে??”
নীলাঃ “ডাক্তার প্লিজ বলুন আমার মেয়ে কেমন আছে?”
প্রফ. হাসানঃ “মা, তোমার মেয়ে আল্লাহ-র রহমতে বিপদ মুক্ত। আমরা আর ২ দিন ওকে পর্যবেক্ষনে রেখে তারপর কেবিনে দিয়ে দিব। কিন্তু প্রশ্ন হলো ও তো তোমাদের বাসায় সুস্থ্য থাকতে পারবে না। বাসায় যাবার পরে ওর এধরনের সমস্যা আবার হতে পারে”।
সাগরঃ “কেনো?? বাসায় সমস্যা হবে কেনো?”
প্রফ. হাসানঃ “দেখো ওর সমস্যটা হবার জন্য দায়ী তুমি। অপ্রিয় হলেও বলতে হচ্ছে বাবা হিসাবে তুমি সন্তানের ভালোটা বুঝতে পারোনি। তুমি সিগারেটের ধোয়ায় বাসার পরিবেশটা এমন বিষাক্ত করে রেখেছো যে তোমার মেয়ে ঐ বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারবে না”।
নীলা চোখ মুখ শক্ত করে ডাক্তারের কথা শুনছে। উনি বলে যাচ্ছেন, “তুমি বাসায় ধূমপান করো। এমনিতেই সিগারেটের ধোয়া সব মানুষের জন্যই ক্ষতিকর। কিন্তু এটা শিশুদের জন্য খুব বেশি ক্ষতিকর। তোমার সিগারেটের ধোয়া তোমার মেয়ের শ্বাসনালীকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। এজন্যই সাময়িক ভাবে ও শ্বাস নিতে পারছিলো না। ও যদি আবার সেই পরিবেশে ফিরে যায় তাহলে একই সমস্যা আরও ভয়াবহ ভাবে দেখা দেবে। এখন তুমি ঠিক করো, তুমি কাকে বেশি ভালোবাসো। মেয়েকে না সিগারেটকে??”
সাগরের মুখ থেকে রক্ত সরে গেছে। প্রচন্ড অপরাধবোধের ভারে মাথাটা নিচু হয়ে আছে। ভিতরে ভিতরে ওর বুকটা ফেটে যাচ্ছে। ডাক্তার বলে যাচ্ছেন, “যারা ধূমপান করে তারা নিজের চেয়ে তাদের আশেপাশের মানুষদের ক্ষতি করে বেশি। বিশেষ করে শিশুদের। আমরা নিজেদের কে অনেক প্রগতিশীল বলে মনে করি অথচ মজার কথা হচ্ছে আমরা নিজেরা নিজেদের ভালোটা বুঝি না। এখন বাবা হিসাবে তোমার কর্তব্য তুমিই ঠিক করো। আমি কালকের পরে ৭ দিনের ছুটিতে যাচ্ছি। ডাঃ শিফাকের কাছে শুনলাম তোমরা ওর ভালো বন্ধু। তাই তোমাদের সাবধান করার জন্য ডেকে এনেছি”।
সাগর হঠাৎ প্রফেসর হাসান এর কাছে যেয়ে উনার হাতটা ধরে বলে, “স্যার, আমাকে মাফ করে দেন। আমি……আমি” আবেগে গলা ধরে এসেছে ওর। প্রফেসর হাসান তাঁর স্নেহমাখা হাতটা সাগরের কাঁধে রেখে বলেন, “সিগারেটটা ছেড়ে দাও”।
এর ঠিক এক সপ্তাহ পরের বিকাল বেলা। মন খারাপ করে বারান্দায় বসে আছে সাগর। আজ অবশ্য ওর পরীর বাচ্চার কোন কিছু হয়নি। সমস্যা এখন তার পরীকে নিয়ে। সেদিন প্রফেসর হাসান এর রুম থেকে বের হবার পর আজ পর্যন্ত নীলা ওর সাথে কথা বলেনি। গতকাল নবনীকে ওরা বাসায় এনেছে। মেয়ে তার এখন সুস্থ্য যদিও শরীরটা একটু দূর্বল। সাগর বারান্দায় বসে বসে ভাবছে নীলা এটা কতদিন অব্যহত রাখবে। গত ৭ দিনে মাত্র ২ টা সিগারেট খেয়েছে সে। বাসায় সিগারেট খাওয়া তো দূরে থাক সিগারেটের প্যাকেটটা পর্যন্ত আনেনি। কিন্তু তারপরও নীলা কথা বলছে না। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই কোলের উপর নবনী এসে ঝাপ দিয়ে পরে।
-“বুবা, বুবা, উমম”। নবনীর হাতে ধরা একটা কাগজ। সে সেটা নিয়ে সাগরের মুখের সামনে ধরে রেখেছে। এর মানে হলো সাগরকে এখন হয় কাগজে কিছু লিখতে হবে না হয় কিছু আকতে হবে।
সাগর মেয়েকে কোলে নিয়ে রুমে যায়। নীলা বসে টিভি দেখছে। সাগর একটা নীল মার্কার পেন বের করে। মেঝেতে বসে কাগজের উপর বড় করে একটা সিগারেটের ছবি আঁকে। নবনী পাশে বসে বাবার আঁকা দেখছে। সাগর বুঝতে পারে আড় চোখে নীলাও দেখছে। মুচকি একটা হাসি খেলে যায় ওর ঠোঁটে। সিগারেট আঁকা হলে বড় করে একটা ক্রস X চিহ্ন দিয়ে সিগারেটটা কেটে দেয়। নিচে লেখে “ধূমপান থেকে পরিবার ও আশেপাশের মানুষ অনেক বেশি প্রিয়। তাই আমি আজ থেকে ধূমপান কে না বলছি”। লেখা শেষে লাইটার আনার ছুতোয় পাশের রুমে যায়। মনের ইচ্ছা হলো নীলা যেন লেখাটা পড়ে। ফিরে এসে মেয়েকে বলে, “কি রে পরীর বাচ্চা আগুন ধরাবি? আয় শেষ বারের মত বাপ বেটি মিলে এই কাগজে আঁকা সিগারেটটা ধরাই”। কথা শেষ করে কাগজে আগুন ধরায় সে। নবনী কিছু না বুঝেই হেসে কুটিকুটি। কাগজ পুড়ে ছাই হয়ে গেলে ছাই টুকু মেঝে থেকে তুলে মেয়ের হাত ধরে বারান্দায় যায় সাগর। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ছাইটুকু ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয় সে। তার দেখাদেখি নবনীও ফুঁ দেবার চেষ্টা করে। হেসে ফেলে সাগর। হঠাৎ কাঁধে একটা হাতের আলতো ছোঁয়া পায় ও। স্পর্শটা তার খুব পরিচিত। ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখে নীলা দাঁড়িয়ে। চোখে ভালোবাসা মিশ্রিত অভিমানের জল। যে জলের আহ্বান উপেক্ষা করার শক্তি বিধাতা কোন পুরুষকে দেননি।
পরিশিষ্টঃ
গতকাল ফেসবুকে এক ছোট বোন অনুরোধ করে বললো, “ভাইয়া, smoking নিয়ে একটা লেখা লিখবেন প্লিজ”। এরপর থেকেই ভাবছিলাম কি লেখা যায়। ভাবনার সমাধান দিলো ফুটপাতে পড়ে থাকা একটা সিগারেটের প্যাকেট। আজ টাউন সেন্টার থেকে আসার পথে ঐ সিগারেটের প্যাকেটে একটা লেখা দেখলাম যার সরল বাংলা হল, “ধূমাপান আপনার এবং আপনার চারপাশের মানুষের বিভিন্ন অঙ্গের মারাত্নক ক্ষতি করে”। তারপর এই কাহিনীর জন্ম। যে আপুটার জন্য গল্পটা লেখা তাকে স্মরণ না করাটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
গল্পটা, লতিফা রহমান, আপু তোমার স্মরণে।
editor's pick
latest video
news via inbox
Nulla turp dis cursus. Integer liberos euismod pretium faucibua