আমাদের কোরবানি
আমরা আসলে কী কোরবানী দিচ্ছি? ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর, মনের পশু কোরবানী, গরীব মানুষদের মাঝে একটা দিন মাংস বিলানো – এমন বেশ কিছু আবেগী ডায়লগ কোরবানী ঈদ আসলেই শোনা যায়। আসলেই কোরবানী মানে কি তাই?
আপনি হাটে যাচ্ছেন চারপাশে খবর নিয়ে – কোন হাটে গরু সস্তা।
হাটে যাবার পথে যারা গরু কিনে বাড়ি ফিরছে তাদের কাছে দাম জিজ্ঞেস করছেন। আপনার উদ্দেশ্য দাম কেমন তা যাচাই করা।
দাম শুনে কখনো আপনি মুচকি হাসছেন – কারণ আপনার হিসাবে এই ক্রেতা ভীষণ ভাবে ধরা খেয়েছে। আবার কখনো ভ্রু কুচকে তাকাচ্ছেন – কারণ এই ক্রেতা সস্তায় বড় গরু কিনেছেন। আপনার মনে তখন আশা আপনিও এমন একটা দাও মেরে সবাইকে চমকে দেবেন।
হাটে যেয়ে আপনি গরু দেখছেন। মনে মনে মেলানোর চেষ্টা করছেন – পাশের বাসার রহিম সাহেবের গরুটা কি এর চেয়ে বড় না ছোট। এই গরু কিনলে পাড়ার লোকের কাছে সম্মান থাকবে তো?
দামাদামির এক পর্যায়ে আপনি হিসাব করা শুরু করলেন – গরুটা কত মন হবে। তারপর আপনার ক্যালকুলেশন শুরু হল – এই টাকায় গরু কিনলে প্রতি কেজি মাংস কত টাকা পড়লো।
রাস্তা দিয়ে গরু নিয়ে আসছেন। মানুষ দাম জিজ্ঞেস করছে। আপনি বলছেন। তারাও মন্তব্য করছে। কেউ বলছে – ভাই জিতছেন। আপনার মন খুশিতে ভরে যাচ্ছে। কেউ বলছে – দাম মনে হয় বেশি হল। আপনি মন খারাপ করছেন।
এলাকায় গরু নিয়ে আসার পর লোকজন আপনার গরু দেখতে আসলো। তারাও বিভিন্ন মন্তব্য করছে। আপনি কখনো খুশি কখনো বেজার হচ্ছেন।
এরপর আপনি কসাই ডাকলেন। তারা গরু বানানোর জন্য একটা এমাউন্ট দাবী করলো। আপনি তাদের সাথে মুলামুলি শুরু করলেন।
ঈদের দিন গরু জবাই শেষে আপনি মাংশ মাপতে বসলেন। কেজি কেজি মেপে আপনি পাত্রে রাখছেন আর ভাবছেন এক্সপেকটেশন অনুযায়ী মাংস হবে তো।
আপনার মাপা শেষে আপনি হয় খুশি হচ্ছেন না হয় মন খারাপ করছেন। এরই মধ্যে কেউ এসে বললো – সিদ্দিকুর সাহেবের ছোট গরুতেই প্রায় আপনার গরুর সমান মাংস হয়েছে। আপনি চরম হতাশ হয়ে বসে থাকলেন। খানিক বাদেই অন্য একজন এসে বললো – করিম সাহেবের বড় গরুতে আপনার গরুর চেয়ে কম মাংশ হয়েছে। আপনার এখন বেশ হালকা লাগছে – যাক আপনি একাই ধরা খাননি।
এই পুরো প্রক্রিয়াটার মধ্যে ত্যাগ কোথায়? পুরোটা জুড়ে শুধু ব্যবসা। হারজিতের খেলা খেলছেন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। গরু কোরবানী হচ্ছে তাতে আপনার কষ্ট নেই। আপনার দুঃখ মাংস কেন কম হল।
যে পশুটা কোরবানি দিচ্ছেন তার প্রতি কোন দরদ নেই। নেই কোন ইমোশন। আপনি পশুটাকে বিশাল একতাল মাংস পিন্ড ছাড়া আর কিছুই ভাবছেন না। আপনার ভাবনা জুড়ে আগামী একবছরের মাংসের মজুদ ফ্রিজে রাখার চিন্তা।
আমরা আসলে কী করছি? এটাকে কোরবানী না বলে ব্যবসা আর প্রতিযোগিতার উৎসব বললে খুব কি ভুল বলা হবে?
editor's pick
latest video
news via inbox
Nulla turp dis cursus. Integer liberos euismod pretium faucibua