অলিম্পিক ও আমরা
লেখাটার শিরোনাম নিয়ে একটু চিন্তায় ছিলাম। একটু বললে ভুল হবে, বেশ চিন্তায় ছিলাম। আমার লেখার শিরোনাম আবার খুব একটা জুতসই হয়না। যাইহোক, খুব তাড়াতাড়ি আসল কথাটা বলে ফেলি। অতিথি লেখক হিসাবে সচলে বেশি কথা না বলাই ভালো। ঘটনা হলো আমার মন খারাপ। প্রথমে মাত্রাটা কমই ছিলো। কিন্তু অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখার পর সেটা বেশ ভালোই বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথমে একটু মন খারাপের কারণটা বলে নেই। আমার বাসা থেকে মাত্র ঘন্টাখানেক দূরত্বে আজ রাতে জমকালো অনুষ্ঠানটা হলো। থিসিস, পয়সা আর টিকিটের দুষ্প্রাপ্যতা- এই ত্রিমুখী সংকটে দুধের স্বাদ ঘোলেই মেটালাম। ইফতার শেষ করেই টিভির সামনে বসলাম। সামান্য মন খারাপের কারণ এটাই। অনুষ্ঠান দেখছি। নাচ, গান, আলোর ঝলকানি, লেজার শো, বিখ্যাত ব্যক্তিদের উপস্থিতি- সব মিলে দেখার মত অনুষ্ঠান বটে। মাঝখানে রোয়ান অ্যাটকিনসন রূপী মিঃ বিনের উপস্থিতি দেখার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিলো। একের পর এক আইটেম আসছে। বিবিসি স্পোর্টসের ধারাভাষ্যকার হিউ হাওয়ার্ড তার স্বভাব সুলভ নাক উঁচু ভংগীতে ব্রিটিশ ঐতিহ্যের প্রশংসায় গলা ফাটাচ্ছে। হঠাৎ ডেভিড বেকহাম কে দেখলাম। টেমসের উপর দিয়ে স্পিড বোটে করে অলিম্পিক মশাল আনছেন। ততক্ষনে অংশগ্রহণকারী দেশ গুলোর পরিচিতি পর্ব শুরু হয়ে গেছে।
এবার আমরা একটু নড়েচড়ে বসলাম। আমি আর আমার ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা (সোহেল ভাই, মাশরুক, মাকনুন আর সৌরভ দা) অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি কখন বাংলাদেশের পতাকাটা দেখা যাবে। উৎসাহের আরো একটা কারণ- নাক উঁচু ব্রিটিশ মিডিয়া আমাদের দেশকে কিভাবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরে তা দেখা।
প্রথম আসলো গ্রিস- অলিম্পিকের উৎস ভূমি। সেই ৭৭৬ খ্রিস্টপূর্বে শুরু হওয়া অলিম্পিকের জন্মস্থান হিসাবে গ্রিসকে পরিচিত করিয়ে দিল তারা। গ্রিসের পর ইংরেজী বর্ণমালার ক্রমানুসারে একে একে দেশগুলো পরিচিতি পর্বে অংশ নিচ্ছে। আমরা এক সেকেন্ডের জন্যও টিভি থেকে চোখ সরাচ্ছি না। পাছে আমার দেশের দৃশ্য মিস হয়ে যায়। অবশেষে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা দেখলাম। স্বাভাবিক ভাবে দর্শকদের মধ্যে হাততালি দেবার কোন আগ্রহ দেখলাম না, যা খুবই প্রত্যাশিত। কিন্তু একটু পর ধারা বর্ণনাকারীদের মুখে যা শুনলাম তা খুবই অপ্রত্যাশিত ছিল। এতক্ষন যে আবেগ বুকে চেপে অপেক্ষা করছিলাম তার সবটুকুই এক নিমিষে গায়েব হয়ে গেলো। সেখানে স্থান পেলো লজ্জা আর হতাশা। কিছুক্ষন পর সেই হতাশা পরিণত হলো ক্ষোভে। পাঠক, আপনি যদি না দেখে থাকেন তবে আপনার অবশ্যই জানতে ইচ্ছা করছে কি এমন কথা বলেছিলো তারা।
না পাঠক তারা তেমন কিছু বলেনি। ভুল বলেছে তাও বলা যাবেনা। তারা আমাদের প্রিয় স্বদেশকে নিয়ে মাত্র দুটি মন্তব্য করেছেন। জাতি হিসাবে কথা বলায় ব্রিটিশরা কৃপণ তা কেউ বলেনা। এরা মনে যাই থাকুক মুখে ভদ্রতার খাতিরে অনেক ভালো কথাই বলে- এতদিন তাই দেখে আসছি। কিন্তু আজ ধারণা ভুল প্রমাণিত হল। তারা যা বলেছিল তার সরল অনুবাদ হল-
“১৬০ মিলিয়ন মানুষের দেশ থেকে মাত্র ৫ জন প্রতিযোগী। এটাই বিশ্বের সবথেকে জনবহুল দেশ যারা কোনদিন অলিম্পিকে পদক জেতেনি”।
কথা খুবই সত্য। মর্মান্তিক ভাবেই সত্য। কিন্তু অলিম্পিকে পদকতো কত দেশই জেতেনি। তাই বলে এভাবে বলতে হবে?? ভাবতে খারাপ লাগলেও, মেনে নিতে কষ্ট হলেও এটাই বাস্তবতা। এরপরে আরও অনেক দেশ আসলো-গেলো। আগে নাম শুনিনি এমন দেশও ছিল তার মধ্যে। কিন্তু আর কোন দেশের জন্য তাদের এমন রূঢ় মন্তব্য বরাদ্দ ছিলো না। হাইতিকে পরিচিত করানো হলো কিছুদিন আগের প্রাকৃতিক দূর্যোগের কথা বলে, সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে শুরু করে মরিশাসের পর্যটন শিল্প সবকিছুই উঠে আসল। বিশ্ববাসী তাদের চিনলো, জানলো। কিন্তু আমাদের বেলায় কি আর কিছু ছিল না তুলে ধরার মত?? হয়তো তাদের কাছে নাই। চিন্তাগুলো যতই দূর করতে চাচ্ছি ততই ভাবনার জট বাড়ছে। মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
তবে এরপরও আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। মন থেকে ধন্যবাদ জানাই। কেন জানতে চান?? কারণ হলো তারা অন্তত আরো কঠিন ও লজ্জাজনক কিছু সত্য তুলে ধরেনি। তারা যদি নিচের কথা গুলো বলে বসতো সবার সামনে তাহলে কি খুব একটা অন্যায় হয়ে যেত?? যদি তারা বলতো যে,
১. এটা এমন একটা দেশ, যে দেশের পক্ষ থেকে ৫জন খেলোয়াড়ের দেখাশোনার জন্য ২২ জন কর্মকর্তা পাঠানো হয়েছে। খেলোয়াড়দের দেখাশোনার প্রতি এমন নজরদারি অবশ্যই প্রসংশার যোগ্য।
২. বাংলাদেশ সরকার খেলাধূলার ব্যাপারে খুবই আন্তরিক কারণ শুধুমাত্র অলিম্পিক উপলক্ষে দেশের প্রধানমন্ত্রী সহ ৫৫ জনের একটা দল এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। এই আন্তরিকতা খুব কম সরকারই দেখায়।
তারা উপরের কথা গুলো বলেনি দেখে মনে কষ্ট থাকলেও বেশ স্বস্তি পাচ্ছি। আজ ঘুমটা মন্দ হবেনা। কিন্তু জাতির ঘুম ভাঙবে কবে তা কে বলতে পারে।
editor's pick
latest video
news via inbox
Nulla turp dis cursus. Integer liberos euismod pretium faucibua