স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার
এপ্রিল ০৯, ২০২৪
আজ ৩০শে রমজান। শব্দটা “রমজান” হবে না “রমাদান” এটা নিয়ে বেশ কনফিউশনে আছি। শুধু এটা না, ইদানিং অনেক আরবী শব্দের উচ্চারণগুলোয় কেমন যেন গোলমেলে লাগে। যেমন, ওযু না উধু? হাদিস না হাদিথ? সালাত না সালাহ? বিদেশে এরাবিক পেনিনসুলার মানুষজন এমনকি আফ্রিকার মুসলিমদের মুখেও ভিন্ন ধরণের উচ্চারণ শুনে শুনে নিজেকে ভিন্ন জগতের বাসিন্দাই মনে হয়। তা এ এক ভিন্ন জগতই তো। বিশেষকরে এই ভিন্নতা খুব বেশি অনুভব করি রোজা আর ঈদের সময়। দেশের ঈদ, ঢাকার ঈদ – আহা! এর যে অনুভব সেটা এখানে কোথায়?
২০২১ থেকে আমি ঢাকায় ঈদ পালন করিনা। ২০২১ এর দুটো ঈদ কেটেছে পালংখালিতে। এমএসএফের হাসপাতালে। ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে। ২০২২ থেকে আমার ঈদের দিনগুলো কাটছে ইউকে তে। ২২, ২৩ পার হয়ে এখন ২৪। কাল পবিত্র ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদ। এপোলো ওয়ার্কসের ডি – ১২.২ নাম্বার রুমে বসে আমি আকাশ দেখছিলাম। এক চিলতে আকাশ। আমার জানালার সামনে একটা নাম না জানা গাছ। শীতের পুরোটা সময় গাছটাতে কোন পাতা ছিল না। এখন বসন্তের শুরুতে অল্প অল্প করে পাতা বের হচ্ছে। আমার জীবনটা এখন এই গাছটার মত। একেবারে বিবর্ণ হবার হাত থেকে গাছের পাতার মত আমাকে কিছুটা সাজিয়ে রেখেছে আমার অসমাপ্ত কিছু কাজ, কিছু স্বপ্ন।
হঠাৎ অনেকদিন পরে এই লেখাটা কেন লিখতে বসলাম তার কারণটা জানিয়ে দেই। প্রথম আলোর পাতায় চোখ বুলানো আমার রেগুলার কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেটা করতে গিয়েই চোখ আটকে গেল স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার নামের একটা লেখায়। লেখাটা গ্রামীণ ফোনের বিখ্যাত “স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার” এডটাকে নিয়ে। কীভাবে এডটা তৈরি হল – এসব। আমার অবশ্য এসবে তত আগ্রহ নেই যতটা আগ্রহ আছে এডের খুব শ্রুতি মধুর গানটার প্রতি। গানটা শুনলেই একটা অন্যরকম আবেগ কাজ করে। আজকেও যখন শুনছিলাম চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছিলো। হঠাৎ এটা নিয়ে কিছু একটা লেখার তীব্র তাগিদ অনুভব করলাম। যার ফলাফল এই বকবকানি।
ঈদ সম্পর্কিত হাজারো কথা মনের মধ্যে এসে ভীড় করছে। সেই ছোট্ট বেলা থেকে শুরু করে এই পড়ন্ত বেলা পর্যন্ত। এর মধ্যে বাইরে কাটানো ঈদের সময়গুলো নিদারুণ কষ্টের অনুভূতি তৈরি করে আছে। অবাক হয়ে দেখছি ঈদ কেন্দ্রিক কত কিছু যে আমি ভুলে গেছি। জামা কাপড়ের প্রতি কোন আকর্ষন তেমন একটা ছিল না কখনো। কিন্তু গত চার বছরে আমি নিজের জন্য ঈদের জামা কিনিনি। কেউ আমার জন্য কেনেনি। এই চার বছরে আমি ঈদের দিনের সকালটা শুরু করেছি ঈদের দিনের স্পেশাল কোন খাবার ছাড়া। এবারো সম্ভবত তাই হতে যাচ্ছে। শুধু সকাল না, সারাটা দিনই যাবে স্পেশাল কোন কিছুই ছাড়া। আমার কাছে আমার এই একাকিত্বই এখন সবথেকে বেশি স্পেশাল। আমি না হঠাৎ করেই চারপাশে একটা বিশাল শূণ্যতা দেখছি।
শূণ্যতার কথা বলছিলাম। স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার – এডটা বুকের মধ্যে তীব্র একটা হাহাকার তৈরি করে। আপনি যদি বাড়ির বাইরে না থাকেন, দেশের বাইরে না থাকেন, তা হলে আপনি বুঝবেন না এই অনুভূতির তীব্রতা। কতটা হাহাকার জমা হলে পোড় খাওয়া চোখ এখনো কাঁদায়, কতটা শূণ্যতার মেঘে কষ্টের বর্ষা নামে – আপনি বুঝবেন না। আমি চাই না আপনি বুঝুন। আপনারা বুঝুন। সহ্য করা খুব কষ্টরে ভাই। হয়তো প্রশ্ন করবেন – কেন এই স্বেচ্ছামৃত্যু? উত্তর খুব সহজ। আমার ভবিষ্যত উত্তরাধিকার যেন তাদের বাড়িটাকে নিজেদের স্বপ্ন দিয়ে সাঁজাতে পারে। যেভাবে আমার বাবা আমাদের জন্য তার সুখের স্বপ্নগুলোকে বাড়ি ছাড়া করেছিলেন, ঠিক সেভাবে আমিও আমার স্বপ্নগুলোকে আর বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাই না। সবার স্বপ্ন বাড়ি যায় না। যেতে পারে না।
editor's pick
latest video
news via inbox
Nulla turp dis cursus. Integer liberos euismod pretium faucibua